অনলাইন রেল টিকিটে জালিয়াতি
৫ আগস্ট ২০১৯, ২১ শ্রাবণ ১৪২৬, ৩ জিলহজ ১৪৪০
'আজকে সন্ধ্যায় হঠাৎ জরুরি কাজে বড় ভাইকে মোহনগঞ্জ যাওয়ার জন্য হাওর এক্সপ্রেস শোভন এ একটা টিকেট করে দেই। কিন্তু স্টেশনে যাবার পর দেখা গেল, একই টিকেট একই সিট নাম্বার নিয়ে অন্য একজন বয়স্ক মহিলা হাজির!' উনি কমলাপুর স্টেশন থেকে গিয়ে ট্রেনে উঠেছেন।
সোশ্যাল সাইটে বাংলদেশ রেলওয়ে ফ্যান গ্রুপে এমন অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন একজন ভুক্তভোগী। শুধু তিনি নন; ইদের আগমুহূর্তে গেছে। টিকিট জালিয়াতির এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর ভুক্তভোগী হতে হয় অনলাইনে টিকিট কেটে পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট করে ট্রেনে ওঠা যাত্রীদের। এই প্রতিবেদকও খুব কম সময় ট্রেনে টিটিইদের টিকিট চেক করতে দেখেছেন। তাদের সব মনযোগ থাকে বিনা টিকিটে কিংবা দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রীদের থেকে রশিদ ছাড়া টাকা আদায় করা।
ঘটনা অনুসন্ধানে বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। অনলাইনে টিকিট কাটার পর যে পিডিএফ ফাইলটি দেওয়া হয়, রেলের নির্দেশনা অনুযায়ী সেটা প্রিন্ট করে ট্রেনে উঠলেই চলে। টিকিটে মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেওয়া থাকে; টিটিইর দায়িত্ব যাত্রীর টিকিটের সঙ্গে এই দুটি বিষয় মিলিয়ে নেওয়া। কিন্তু ট্রেনে টিকিট চেক হলে তো...? এনআইডি আর মোবাইল নম্বর মিলিয়ে টিকিট চেক করলে সহজেই ধরা যায় কোন টিকিটটা আসল আর কোনটা নকল।
সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দেশের প্রায় সকল ট্রেনে টিকিট চেক করা হয়না। এনআইডি-মোবাইল নম্বর মিলিয়ে দেখা তো দূরের কথা। এই সুযোগটাই নিচ্ছে জালিয়াতরা। তারা ফটোশপ ব্যবহার করে কোচ এবং সিট নাম্বার অপরিবর্তিত রেখে যাত্রার তারিখ কিংবা ট্রেনের নাম বদলে দিচ্ছে। তারপর কালোবাজারে যাত্রীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে সেসব টিকিট। ট্রেনে ওঠার পর সেই যাত্রী বুঝতে পারছেন, তিনি আসলে ঠকেছেন! তাছাড়া রেলের অসাধু কর্মচারীরাও ফেরত দেওয়া টিকিট দুইবার বিক্রি করছে।
এক সিটে দুই যাত্রী হওয়ায় কথা-কাটাকাটি-ঝগড়ার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্রেনের কর্তব্যরত গার্ড-টিটিই-পুলিশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। যে কারণে ঝগড়ায় কাউকে না কাউকে হার মেনে নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। এখন অনলাইন টিকিট কাউন্টার থেকে প্রিন্ট করে নেওয়া যাত্রীদের জন্য ভালো সমাধান হতে পারে; কিন্তু তা জালিয়াতদের কাছে একপ্রকার নতি স্বীকার করা। তাছাড়া কাউন্টারেই যদি লম্বা লাইন দিয়ে টিকিট প্রিন্ট করাতে হয়; তবে অনলাইন টিকিটের সুফল পাবেন না যাত্রীরা।
বেশ কয়েকমাস হলো দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটতে নাম এবং এনআইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কারণ ট্রেনে টিকিটই চেক করা হয় না। অনলাইন টিকিটে কিউআর কোড থাকে; যা স্ক্যান করলেই যাত্রীর তথ্য পাওয়া যায়। ওই কোড স্ক্যান করার কোনো যন্ত্রও দেওয়া হয়নি টিটিইদের। অ্যানালগ সিস্টেমে যাত্রীর কাছ থেকে এনআইডি দেখার প্রয়োজনই মনে করেন না টিটিরা। যে কারণে হয়রানি চলছেই।
এই নিউজ মোট 2804
বার পড়া হয়েছে