অনিয়ম ও দুর্নীতির আতুর ঘর পিরোজপুরে ইসলামিক মিশন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র

অনুসন্ধানী অর্থনীতি ওকে নিউজ স্পেশাল জনদুর্ভোগ দুর্নীতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ইসলামিক মিশন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সংসদ সদস্য আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য চালু হওয়া এই কেন্দ্রটি শুরুতে ভালোভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করলেও বর্তমানে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে নিয়োজিত সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামতো অফিস পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, ১০ টাকার আমপারা (সেফারা) ৩০ টাকা দেখিয়ে কেনা হচ্ছে, ৩৯০০ টাকার চেয়ার ১৪০০০ টাকা দেখানো হচ্ছে, ১৫০০০ টাকার গাছ বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারে ৮০০০ টাকা দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও ওষুধ ক্রয় ও বিতরণেও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রবিবার (৬ এপ্রিল) ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ডা. আবু সুফিয়ান কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন না। সকাল ১১টার সময়ও সরকারি পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে ডাক্তারকে না পেয়ে ফিরে যান। তারা অভিযোগ করেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহও সঠিকভাবে করা হয় না।

অফিস সহকারী মোঃ শামিম আকনকে ফোনে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি। অপরদিকে, ডা. আবু সুফিয়ানকে মোবাইল ফোনে এসব অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি বর্তমানে সরকারি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

ইন্দুরকানী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ১ জন সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবুসুফিয়ান কর্মরত আছেন। আগত রুগীদের থেকে জানা যায় তিনি পদায়নের পর থেকে অত্র কেন্দ্রে সপ্তাহে ২/৩ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত রুগী দেখেন। বাকি দিনগুলোতে তিনি পরিবারের সাথে ঢাকায় বসবাস করেন। আগত রুগীগণ মনে করেন নিয়মিত ডাক্তার থাকলে আমরা ভালোভাবে সেবা পেতাম। সরেজমিনে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পান যে অত্র কেন্দ্রের হিসাব সহকারী মোঃ শামীম আকন রুগী দেখতেছেন ও ঔষধ দিচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী ১ জন রেজিষ্ট্রার ডাক্তার ছাড়া রুগী দেখার বিধান নেই এবং ঔষধ বিতরণের ক্ষেত্রেও ১ জন ফার্মাসিষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। উক্ত বিষয়ে হিসাব সহকারী মোঃ শামীম আকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোন সৎ উত্তর দিতে পারেননি এবং সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু সুফিয়ান সাহেবকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ প্রতিবেদক আরো জানতে পারেন যে, অত্র কেন্দ্রের ডাক্তার সাহেব ও হিসাব সহকারী শামীম আকন মিলে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে অফিসের কেনাকাটা করে (কম মূল্যে ইচ্ছামতো বেশি বিল ভাউচার করে )সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেন। যাহার কিছুটা প্রমাণ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক্তার সাহেব ও হিসাব সহকারী কোন সৎ উত্তর দিতে পারেনি।

আরো জানা যায়যে, ডাক্তার আবু সুফিয়ান অত্র কেন্দ্রে পদায়নের পূর্বে ইসলামিক মিশন, বিজয় নগর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-তে কর্মরত ছিলেন। তাহার কর্মকালীন সময়ে আওয়ামী সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী আস্থাভাজন থেকে নিজের ইচ্ছামতো অফিস করেছেন এবং অফিসের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেছেন এবং ৫ই আগষ্টের পরে তাহাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সাজা হিসাবে পিরোজপুলে বদলী করেন। অত্র কেন্দ্রে যোগদানের পরে তিনি মূল মুখোশ পাল্টে জামায়াত সমর্থিত অফিসার হয়ে যান। এলাকাবাসী তথা রোগীগণ মনে করেন যে, ইসলামিক মিশন বালিপাড়া, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর কেন্দ্রের পূর্বের হারানো গৌরব ফিরে পেতে তাদেরকে সরিয়ে সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসার পদায়ণ প্রয়োজন।

আরো পড়ুন : টেকসই অর্থায়ন-ই হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সমাধান

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *