আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ এর ৫১তম বার্ষিকী

ইতিহাস-ঐতিহ্য ওকে নিউজ স্পেশাল জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতি শিক্ষা শিল্প-সাহিত্য সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক দেন।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এক ও অবিচ্ছেদ্য বিষয়। স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর কাছে কোনো আকস্মিক বিষয় ছিল না, বরং ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনিবার্য জাতীয় স্বাধীনতার দিকে তিনি বাংলার জনগণকে প্রস্তুত করেছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এই ঐতিহাসিক ঘোষণার মধ্যে যেমন দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতার কথা অন্তভু‌র্ক্ত তেমনি মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের আকাঙ্ক্ষাও ধারণ করেছে ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।

বঙ্গবন্ধু ’৭১-এর ৭ই মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন ইতিহাসে তার তুলনা খুঁজে পাওয়া যায় না। বাঙালির হাজার বছরের দুঃখ-বেদনা, বঞ্চনা এবং ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার ইতিহাস, কৃষক, কৈবর্ত, উপজাতিদের বিদ্রোহ প্রভৃতির বারুদ ঠাসা উপাদানে তার সচেতন এবং অবচেতন মনে এই ভাষণটি তৈরি হয়ে প্রকাশের জন্য উন্মুখ হয়েছিল।

এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্হিতিতে এই মহান নেতা ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ একাত্তরের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ই মার্চে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তীকালে স্বাধীনতাসংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। একইভাবে এ ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষাবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো।

সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। মাত্র ১৮-১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বিভিন্ন স্হানের হত্যাকাণ্ডের তদন্েত বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্ত্তত।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং সেই সভায় উপস্হিত তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার চশমাটা সেদিন ডায়াসের ওপর রেখে ১৮ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার পুরোটাই অলিখিত। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট দিকনিদের্শনা ছিল। সে মোতাবেক আমরা কাজ করেছি।

দিবসটি উপলক্ষ্যে স্বাস্হ্যবিধি মেনে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ দেশব্যাপী ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

ওকে নিউজের পক্ষ থেকে প্রকাশক শেখ মোঃ ওবাইদুল কবির ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষ্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক ভাষণের আজ ৫১তম বার্ষিকী। সেই ভাষণ এখন কেবল বাঙালি জাতির সম্পদই নয়, ইউনেসকো এই ভাষণকে বিশ্ব ইতিহাসের ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে আজ তা বিশ্ববাসীর সম্পদেও পরিণত হয়েছে। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সেদিন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে সাড়ে ১৮ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণে ছিল এ দেশের স্বাধীনতার কথা, বাঙালির মুক্তির কথা এবং কীভাবে সে মুক্তি অর্জন করা যায় তার দিকনির্দেশনা। এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে অনুপ্রাণিত করেছিল মরণজয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার। গৌরবময় বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম আজকের স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *