আরাফাতের জানাজায় হত্যাকারীদের বিচারের শপথ

আইন-আদালত ওকে নিউজ স্পেশাল ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত শিশু অধিকার শিশু/কিশোর স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গুলিতে আহত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আরাফাত হোসাইনও না ফেরার দেশে চলে গেছে। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে তাকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর আহলিয়া খেলার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরা ১৪ নম্বর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আরাফাতের প্রথম নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন আরাফাতের ভাই হাসান আলী। জানাজায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। শহীদ আরাফাতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার শপথ উচ্চারণ করেন।

১২ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীর জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আরাফাতের বাবা শহীদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম প্রমুখ।

জানাজা শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গণহত্যাকারীদের আমরা বাংলার মাটিতে বিচার নিশ্চিত করবো এ ঘোষণা দিয়েই আমরা একদফা ঘোষণা করেছিলাম। এক বিন্দু পরিমাণও আমরা পিছপা হইনি। আমরা বিচার নিশ্চিত করবোই।

তিনি বলেন, যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং ভাবছে বাইরে থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে, তাদেরকে বলবো বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসবে কেবল বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলার জন্য।

উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সমাজের বিভাজন দূর হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার সমাজের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে রেখেছিল। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা তা দূর করেছি। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ আছি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, এই শহীদ বাবা-মায়ের সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমাদের আর নেই। শহীদ আরাফাত একজন শিশু। দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সে রাস্তায় নেমেছিল। আমাদের শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু শহীদ ও আহত পরিবারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করার দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, এই আন্দোলনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। বিগত সরকারের মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর ক্ষোভ ছিল। সেসময় তারা বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়েছে। আমরা দেখেছি, কীভাবে ২০১৩ সালে তাদের ওপর পুলিশি নিপীড়ন হয়েছে। তবুও তারা রাস্তায় নেমে লড়াই করেছে, আমরা তাদের স্যালুট জানাই। শহীদ ও আহত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভূষিত করে পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব সারজিস আলম বলেন, আমাদের শহীদের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আমরা যেন আমাদের ভাইদের স্বপ্নকে কোনোভাবেই ভুলে না যাই। আমরা কোনো শহীদের পরিবারের বাবা-মাকে তাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না, তবে এতটুকু বলতে পারি খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত অবস্থায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আরাফাত। তার মৃত্যুর ব্যাপারে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের সদস্য ডা. হুমায়ুন কবির হিমু গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে গত ৫ই আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হয় আরাফাত। পরদিন তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পাঁজরে গুলি লাগে। এতে তার ফুসফুস, মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরাফাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আরাফাতের বাড়ি ঢাকার আজমপুরের পাকুরিয়া এলাকায়। উত্তরা জামিয়া রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।

আরো পড়ুন : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিত বিবেচনায় দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি ও মিত্ররা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *