প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর ছক। এ জন্য থানায় ঠুকতে হবে নকল ধর্ষণ মামলা। ভাড়া করা হলো তরুণী, ২০ হাজার টাকায় চুক্তি। নাটকের সব আয়োজনই হলো। তবে নাটকের ‘কুশীলব’ সেই তরুণী সত্যি সত্যিই দলবদ্ধ ধর্ষণের মুখোমুখি হলেন। চুক্তির সময় তরুণীর শর্ত ছিল- তাঁর সঙ্গে খারাপ কিছু করা যাবে না। মেয়েটির আশঙ্কা সত্যি করে দিয়ে ‘খারাপ কিছুই করল’ নকল মামলার পরিকল্পনাকারীরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সিনেম্যাটিক এ ঘটনার নকশাকারী দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কদমতলীর রায়েরবাগ এলাকার দুই বন্ধু জামাল আর মিরাজ। দু’জনই কথিত সাংবাদিক। একজনের ভুঁইফোঁড় অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘দিন প্রতিদিন’, অন্যজনের ‘গণকণ্ঠ’। একই এলাকার সেলিম ও আলমের সঙ্গে ছিল তাঁদের দু’জনের বৈরিতা। মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অভিনব জাল পাতেন জামাল-মিরাজ। তবে ছক অনুযায়ী তাঁরা কাজ করেননি। মিথ্যা ধর্ষণ মামলার জন্য যে তরুণীকে ভাড়া করা হয়েছিল, সেই মেয়েটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় জামাল ও মিরাজের পরিচিত চার ব্যক্তি। দলবদ্ধ ধর্ষণ শেষে তাঁকে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার মিরাজকে গ্রেপ্তার করে ডেমরা থানা পুলিশ। ওই দিন আদালতে জবানবন্দিও দেন তিনি। এর আগে পুলিশের জালে ধরা পড়েন জামাল উদ্দিন সরকার।
ওই তরুণী ও মিরাজ পুলিশকে জানান, জামাল উদ্দিনকে একাধিক ‘মিথ্যা’ মামলায় জড়ায় সেলিম ও আলম। তাদের ফাঁসাতে পাল্টা মিথ্যা মামলার ছক কষেন জামাল ও মিরাজ। হাটখোলা এলাকায় জামালের অনলাইন পত্রিকা ‘দিন প্রতিদিন’ কার্যালয়ে পূর্বপরিচিত ওই তরুণীকে ডাকা হয়। সেখানে ধর্ষণের সাজানো মামলা করতে প্রস্তাব দেন জামাল। এর বিনিময়ে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন ওই তরুণী। পরে ২০ হাজার টাকায় রফা হয়।
ছক অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় মিরাজের মাধ্যমে ওই তরুণীকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসার ফ্ল্যাটে ডেকে নেন জামাল। সেদিন রাতের বিভিন্ন সময়ে অচেনা চার ব্যক্তিকে ডেকে এনে ওই তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পরে রাতেই জামাল, মিরাজসহ অচেনা আরও দুই ব্যক্তি ওই তরুণীকে মোটরসাইকেলযোগে অজানা স্থানে নিয়ে যান। পরে একটি বোতলে চেতনানাশক মিশিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হয়। চেতনা হারালে অটোরিকশায় করে ওই তরুণীকে ডেমরা এলাকার একটি সড়কে ফেলে পালিয়ে যান জামাল-মিরাজরা। খবর পেয়ে ডেমরা পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর ভাবি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমাদের অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়েছিল জামাল ও মিরাজ। তারা আমার ননদকে দিয়ে শুধু মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করানোর প্রস্তাব দেয়। সে প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর মামলার গল্প সাজায় জামাল। খারাপ কিছু করা হবে না বলে জানানো হয়। পুলিশ ও চিকিৎসককে টাকা দিয়ে সবকিছু বানিয়ে মামলা করা হবে বলে জানানো হয়। তবে ঘটনার দিন ননদকে একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে তাকে অচেতন করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, থানায় যাওয়ার পর আমাদের যে যা বলেছে, আমরা তা-ই করেছি। এত বাজে আচরণ করা হবে, এটা কল্পনায়ও ছিল না। টাকার জন্য আমার ননদ বাদী হতে রাজি হয়েছিল।
মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ডেমরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) সুব্রত কুমার পোদ্দার বলেন, তরুণীকে ব্যবহার করে যাঁরা ধর্ষণের মিথ্যা মামলা সাজাতে চেয়েছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা গেছে। তবে যে চারজন ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, তারা এখনও অধরা। এ ছাড়া তরুণীকে ঘটনার পরপরই পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়েছিল। ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তরুণীর সঙ্গে তারা জঘন্য আচরণ করেছে।
ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কয়েকজনকে ফাঁসানের জন্য ওই নারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয়েছিল। পরিকল্পনাকারী দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।’
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি কেবল আমাদের কাছে এসেছে। প্রথমে বলা হয়েছিল, ঘটনাস্থল ডেমরা থানার। তদন্তে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে পড়েছে। এখন ধর্ষণের ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছি।’
আরো পড়ুন : নকআউট ম্যাচের প্রতিটি ইনিংস ন্যূনতম ১০ ওভার খেলতে হবে।