বিজয়ের মাসে প্রকাশিত হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এক ব্যতিক্রমী বই `আ স্টোরি অব মাই টাইম’

প্রচ্ছদ মুক্তিযুদ্ধ শিল্প-সাহিত্য হ্যালোআড্ডা

বিশেষ প্রতিনিধি: বাঙালির চির গৌরবের বিজয়ের মাসে প্রকাশিত হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এক ব্যতিক্রমী বই। ইংরেজিতে লেখা আ স্টোরি অব মাই টাইম নামের আত্মজৈবনিক বইটি লিখেছেন জাপানপ্রবাসী সাংবাদিক মনজুরুল হক। লেখার সঙ্গে রয়েছে শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামীর জলরং ও চারকোলে আঁকা ছবি।

শনিবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগরের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে কসমস ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। বইটি নিয়ে আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ হায়দার আলী খান, লেখক মনজুরুল হক বইটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এর কিছু অংশ পড়ে শোনান। প্রতিক্রিয়া জানান শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে বইটির প্রকাশনা আমাদের জন্য একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবের। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব কীভাবে শুরু হয়েছিল, বইটিতে সেই প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। তৎকালীন পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা। একে কেন্দ্র করেই বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছিল।’

এনায়েতুল্লাহ বলেন, বাংলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই অনেক লেখা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা এই বই বিদেশি পাঠকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরতে সহায়ক হবে।

হায়দার আলী খান বলেন, বইটিতে দুটি প্রধান বিষয় রয়েছে। একটি হচ্ছে, দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা। অন্যটি প্রকৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষের ভাবনা ও তাদের বীরত্ব। বইটি কেবল আগামী প্রজন্মের বাঙালির কাছেই নয়, বরং সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ যাঁরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক মনজুরুল হকের জন্ম ঢাকায়। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাসের পর মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সাংবাদিকতা করেন বিবিসিতে। ১৯৯৪ সাল থাকে তিনি জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর জাপান প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি জাপানের এনএইচকে রেডিওতে সাংবাদিকতায় যুক্ত, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করছেন ২৫ বছর ধরে। ইতিহাস, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সমালোচনা নিয়ে ইতিমধ্যে তাঁর ১০টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক মনজুরুল হক বলেন, বইটি লেখার জন্য তাঁর অনেক দিনের প্রস্তুতি ছিল। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইগুলো সাধারণত একাত্তরের মার্চ থেকে শুরু হয় এবং ডিসেম্বরে বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। কিন্তু তাঁর এই বই শুরু হয়েছে গত শতকের ষাটের দশক থেকে এবং শেষ হয়েছে একাত্তরের ২৪ মার্চে।

মনজুরুল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে এই বইয়ের প্রধান চরিত্র। ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট দেখার চেষ্টা করেছি। সে সময় ব্যক্তি থেকে পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশী, পুরো দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপকভাবে একটা প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিল। সেই প্রভাবই সবাইকে যুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

শিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জানান, এই বই অলংকরণ করতে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা বিষয় জেনেছেন। নতুন প্রজন্ম অনেক তথ্য জানতে পারবে। কাজটি তাঁর জন্য ছিল আনন্দ ও গৌরবের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মতিউর রহমান লেখকের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অত্যন্ত কাব্যিক বর্ণনা ও নাটকীয় মুহূর্ত সৃষ্টির ভেতর দিয়ে বইটি এগিয়েছে।

একটি নাটকীয় ঘটনা যেখানে লেখক নিজেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁদের প্রশিক্ষণ হলো প্রথমে ডামি বন্দুক দিয়ে। পরে একটি গোপন স্থানে গ্রেনেড ছোড়া ও ৩০৩ রাইফেল ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। তিনি গুলি ছুড়লেন এবং তা লক্ষ্য ভেদ করল। বইটিতে লেখক তুলে ধরেছেন কীভাবে একটি নতুন দেশ গড়ে উঠছে, জেগে উঠছে নতুন মানুষ।

মতিউর রহমান বলেন, প্রকৃতপক্ষে গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যে বিপুল ও বহুমাত্রিক আন্দোলন হয়েছিল, তার প্রভাবেই স্বাধীনতা আন্দোলন বেগবান হয়েছে। ঘটেছিল চূড়ান্ত প্রকাশ।

সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘বইটি স্মৃতিচারণামূলক। একটি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের ভেতর দিয়েই ষাটের দশকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই দিকগুলো লেখক তুলে ধরেছেন।’

আরো পড়ুন : বিজয়ের উচ্ছাসে বাধভাঙ্গা আনন্দে মেতে উঠলো সিলেট

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *