২ সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে আটকে আছে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত

অনুসন্ধানী আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ নারী নারী অন্যান্য নারী নির্যাতন প্রচ্ছদ

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার আরো একটি বছর পার হলো কাল। গতকাল রবিবার ৫ জুন ছিল দেশ জুড়ে আলোচিত মিতু হত্যার ষষ্ঠবার্ষিকী। ২০১৬ সালের এই দিনে নগরীর ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকার সামনে মিতুকে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরদিন প্রথম মামলাটি করেন মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ২০২১ সালের ১২ মে আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়েরের পরপরই পুলিশ বাবুলকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে বাবুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাবুল বর্তমানে ফেনী জেলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

মিতু হত্যায় একে একে দুটি মামলা হলেও গত ছয় বছরে এসব মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেই দাবি মিতুর পরিবারের। যদিও মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই ঘটনায় বাবুল আক্তারই প্রধান সন্দেহভাজন। তার পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

মিতু হত্যায় দায়ের করা প্রথম মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন নামঞ্জুর করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে মিতুর বাবার মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। ফলে মামলাটি নিয়ে এক ধরনের ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্টরা বলেন, মিতু হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তার ছেলে মাহির। তার বোন টাপুরও এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তারা দুজনেই বর্তমানে মাগুরায় তার দাদা (বাবুলের বাবা) আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার কাছে আছে।

পিবিআই সূত্র জানায়, তদন্তের স্বার্থে মাহির ও টাপুরের সাথে কথা বলা খুবই প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। আদালত শিশু আইন অনুযায়ী মাহির ও টাপুরকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিও দিয়েছেন। কিন্তু বাবুলের পরিবার আদালতের এই নির্দেশনা গ্রাহ্য করছে না বলেই পিবিআই দাবি করছে। মূলত বাবুল-মিতু দম্পতির দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই থমকে গেছে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত।

মিতু হত্যায় অংশ নেওয়া কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা আজো কাটেনি। পুলিশের খাতায় মুসাকে পলাতক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার বলছেন অন্য কথা। তিনি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, মুসাকে ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। মিতু নিহত হওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক মুসাকে নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পান্না আক্তার বেশ জোর দিয়েই সংবাদমাধ্যমে বলে আসছেন, বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুসা মিতুকে হত্যা করেছে। সুতরাং মুসাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হোক। আদালতেই তার অপরাধের বিচার হবে।

মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন গতকাল বলেন, গত ছয় বছরেও আমার মেয়ের হত্যামামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আমার নাতি-নাতনির সঙ্গে পুলিশ এখনো কথা বলতে পারেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক আ জ ম ওমর ফারুক বলেন, নিম্ন আদালত থেকে দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পেয়েছিলাম। কিন্তু বাবুলের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এই অনুমতি স্থগিত করেছে। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তবে তদন্তের অন্যান্য দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

আরো পড়ুন : আজ ৬ জুন; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *