৩ ডিসেম্বর হচ্ছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, তবে শীর্ষ দুই পদে দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে অছাত্র চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগের সম্মেলন পেছানো হচ্ছে। তবে ২৪ ডিসেম্বরের আগেই এই সম্মেলন হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে জাপানে যাচ্ছেন ২৯ নভেম্বর। তিনি দেশে ফিরবেন ৩ ডিসেম্বর। সে কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বরের বদলে ঐ মাসের অন্য কোনো দিন নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাক্ষাৎ করতে যান ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এ সময় ৩ ডিসেম্বরের পরে যে কোনো দিন সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন তারিখ নির্ধারণেরও নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা, কয়েকটি জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক এবং কয়েক জন সাবেক ছাত্রনেতা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের পরবর্তী সম্ভাব্য তারিখ ৮ ডিসেম্বর।
এদিকে সম্মেলন সামনে রেখে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা। এই সংখ্যা শতাধিক। অবশ্য শীর্ষ দুই পদে দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে রয়েছেন অছাত্র, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা চালাচ্ছেন জোর তদবির-লবিং। ছুটছেন প্রভাবশালী এবং ছাত্রলীগের দেখভালে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায়-অফিসে। এদের মধ্যে অনেকের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় বয়স বাড়ানোর নানা যৌক্তিকতাও তুলে ধরছেন। জানা গেছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দিতে চান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে পারিবারিক পরিচয়, সংকটে দলের পাশে থাকা, বিতর্কমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব পদপ্রত্যাশীদের বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
সংগঠনের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং বিতর্কমুক্ত করতে ‘ভারপ্রাপ্ত’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দুই শীর্ষ নেতাকে ‘ভারমুক্ত’ করে পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদকাল দুই বছর। আর মেয়াদকালের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করার নিয়ম থাকলেও তা করতে পারেননি জয়-লেখক।
এদিকে, কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের এখন প্রধান উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে নাম পৌঁছানো। এ জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছেও পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে নাম পৌঁছানোর জন্য রোবটিকস ক্যাম্প, বাইসাইকেল বিতরণসহ শিক্ষার্থীবান্ধব নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
২০১১ সালে ২৭তম এবং ২০১৫ সালে ২৮তম সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী সংগঠনটির শীর্ষ দুই পদে নির্বাচন করা হয়। তবে এসব কমিটিতে পদপ্রার্থী ছিলেন হাতে গোনা। সংগঠনটির তৎকালীন নেতৃত্বের অভিযোগ, এসব সম্মেলনে সাবেক নেতৃত্বদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাউন্সিল করা হতো। এতে নিজেদের প্রার্থীরাই নেতা নির্বাচিত হতেন। এই অভিযোগ আমলে নেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এরপর ২০১৮ সালে ২৯তম সম্মেলনে সিন্ডিকেটের প্রভাব ভেঙে নিজেই নেতৃত্ব গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন। প্রতিদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ছয় নেতার মোবাইল ফোনে সহস্রাধিক এসএমএস আসছে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই ছয় নেতার মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে চান প্রার্থীরা। ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের এসএমএসে বিরক্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বিরক্তির কথা জানান তিনি। ‘দয়া করে কেউ মেসেজ দেবেন না’ বলেও ছাত্রলীগকে সতর্ক করে দেন। গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ৫(ক) ধারায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বয়স ২৭ বছর নির্ধারণ করা আছে। তবে বিগত সম্মেলনগুলোতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বিবেচনায় এই বয়সসীমা নির্ধারণ করেছিলেন ২৯ বছর। এবারের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং দীর্ঘ সাড়ে চার বছর সম্মেলন না হওয়ার ফলে বয়সসীমা শিথিলের দাবি তুলেছেন কেন্দ্রীয় অনেক নেতা।
আরো পড়ুন : এক দিনে ইউক্রেনজুড়ে ৮৫ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া