নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে নতুন আইন করছে সরকার। আজ মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে তুলতে গেলে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ এটি উত্থাপনের আপত্তি জানান।
বিলে বৈষম্যমূলক কার্যাবলি চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ভাষা, বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক, মানসিক বা তৃতীয় লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম, পেশা ও অস্পৃশ্যতার অজুহাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিছু কাজ করলে তা বৈষম্যমূলক কাজ বলে গণ্য হবে। এগুলো হলো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সর্বসাধারণের স্থলে প্রবেশ বা উপস্থিতিতে বাধা প্রদান, নিয়ন্ত্রণ অথবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা, সরকারি আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসের সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করা, কোনো পণ্য বা সেবা আইনানুগভাবে উৎপাদন, বিক্রয় অথবা বিপণন করতে বাধা দেওয়া বা আইনে নির্ধারিত কোনো সুবিধা বা পণ্য বা সেবা গ্রহণে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা, উপযুক্ত কারণ ছাড়া মা–বাবার পরিচয় প্রদানে অসমর্থতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি বা অমত বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা বাধা দেওয়া বা সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান বা অবস্থানের ক্ষেত্রে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধিনিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার বা অন্য যেকোনো ধরনের বৈষম্য করা, প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার কারণে কোনো শিশুকে পরিবারে প্রতিপালন না করে বিশেষ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে পরিবারে বসবাসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো বৈধ পেশা বা চাকরি গ্রহণ বা বৈধ ব্যবসা পরিচালনা থেকে নিষিদ্ধ করা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের আয়োজন ও তাতে প্রবেশ ও অংশ নেওয়ার বা নিজস্ব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রবেশ ও অংশগ্রহণ বা নিজ ধর্ম অনুযায়ী দাফন বা শেষকৃত্য বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা সৎকার সম্পাদন ও যোগদানে বাধা প্রদান করা, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, ছুটি, পদোন্নতি, বদলি, বেতন-ভাত-মজুরি বা সুযোগ-সুবিধাদি প্রাপ্তিতে পার্থক্য, বঞ্চনা, বিধিনিষেধ আরোপ, সীমাবদ্ধকরণ বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা চাকরিচ্যুত করা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বাড়ি ভাড়া না দেওয়া বা বসবাসের স্থান প্রদানে অস্বীকৃতি বা অমত প্রদান করা বা আবেদন অনুমোদন না করা বা কঠিন শর্ত আরোপ করা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তার বা তাদের বাসস্থানের অভ্যন্তরে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বাসস্থান বা এলাকা থেকে উচ্ছেদ বা এলাকা বা বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করা, গ্রাম্য সালিস বা সামাজিকভাবে বা ধর্মীয়ভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে একঘরে করা, সামাজিকভাবে বয়কট করা বা হয়রানি করা, তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা রীতিনীতি পালন করা থেকে বিরত রাখা বা তাদের অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ ও পালন বা ত্যাগ করতে বাধ্য করা; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনানুগভাবে সম্পত্তি অর্জনে ও হস্তান্তরে বাধা প্রদান করা এবং সম্পত্তিতে অধিকার বা উত্তরাধিকার লাভে বঞ্চিত করা অথবা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী কমিটি করা হবে। স্থানীয় ও জাতীয় কমিটি প্রতিকার দিতে না পারলে আদালতে মামলা করা যাবে। আদালত যথাযথ প্রতিকারের আদেশ এবং প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারবেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে তুলতে গেলে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ এটি উত্থাপনের আপত্তি জানান। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী এই বিলের কী প্রয়োজন পড়েছে, তিনি বুঝতে পারছেন না। হারুন ‘পাবলিক প্লেসের’ সংজ্ঞায় ধর্মীয় উপাসনালয় রাখার বিরোধিতা করে বলেন, ‘ধর্মীয় উপাসনালয় পাবলিক প্লেস নয়।’ তিনি ধর্মীয় স্থানে প্রবেশ করতে না দিলে বৈষম্য হবে—এ ধারার ব্যাখ্যা চান।
উপযুক্ত কারণে কোনো শিশুর বাবা বা মায়ের পরিচয় দেওয়ার অসমর্থতার বিষয়ে হারুন বলেন, এই বিধান থাকলে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। পিতৃপরিচয়ে সমস্যা থাকলে মাতৃপরিচয় থাকতে হবে।
অবশ্য হারুনের আপত্তি ভোটে টেকেনি। পরে বিলটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।