কূটনৈতিক প্রতিবেদক : ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে গাজা উপত্যকাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ ছিল। অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগের ওপর দুই দিনের শুনানি গতকাল বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হয়েছে। শুনানির প্রথম দিন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা তাঁদের বক্তব্যে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান বন্ধের ওই আবেদন জানান। জাতিসংঘের শীর্ষ এ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইসরায়েল অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। আজ শুক্রবার আইসিজেতে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করবে ইসরায়েল।
মামলাটিতে দুদিনের শুনানিতে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হবে। এ মামলায় সমর্থন দিচ্ছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ৫৭ সদস্যের এই সংস্থায় সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, মরক্কোর মতো দেশ গত ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন জানিয়েছে। ২ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সমর্থনের কথা জানানো হয়। এ ছাড়া তুরস্ক, জর্ডান, বলিভিয়া, মালদ্বীপ, নামিবিয়ার পক্ষ থেকেও সমর্থন জানানো হয়েছে। এর বাইরে সমর্থন জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে।
বলিভিয়া বলেছে, এর আগে গত ৩০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি করিম খানের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, কমোরোস ও জিবুতির সঙ্গে তারা ফিলিস্তিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানায়।
গতকাল গণহত্যা মামলার শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকোর্টের আইনজীবী তেম্বেকা এনকুকাইতোবি বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গণহত্যার উপাদান পাওয়া গেছে। এসব উপাদান থেকে এটা স্পষ্ট যে গাজাকে গুঁড়িয়ে দিতে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বকারী আদিলা হাশিম বলেন, প্রতিদিন ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন, সম্পদ, মর্যাদা ও মানবিকতার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আদালতের একটি রায় ছাড়া, তাঁদের দুর্ভোগের অবসান হবে না।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুনানি শুরুর আগে ইসরায়েলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইসিজেতে তথ্য–উপাত্ত জমা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আদালতে ওই সব তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করে দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, ইসরায়েলের পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট, ফিলিস্তিনি জাতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ওই তৎপরতা চালানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেন, কোনো হামলাই গণহত্যা সনদ লঙ্ঘনের সাফাই দিতে পারে না।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম ইসরায়েল। জাতিসংঘের ওই সনদে যেসব দেশ সই করেছে তাদের গণহত্যা প্রতিহত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আদালতের বাইরে বিক্ষোভ, পুলিশের হস্তক্ষেপ
এদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানির শুরুতে ‘পিস প্যালেস’ নামে পরিচিত আইসিজের বাইরের অংশে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি সমর্থকদের সামাল দিচ্ছিল ডাচ পুলিশ। এ সময় কয়েক শ ফিলিস্তিনি সমর্থক পতাকা হাতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি সমর্থকেরা অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানাচ্ছিলেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সমর্থকেরা আদালতের বাইরে বড় স্ক্রিনে দেখাচ্ছিলেন, গাজায় এখনো জিম্মিদের আটকে রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মতো আইসিজে গণহত্যার মতো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করতে পারে না। তবে আইসিজের মতামত জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থায় গুরুত্ব বহন করে।
গত ডিসেম্বর মাসে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যাপক রকেট হামলা চালায়। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজা উপত্যকায় নারকীয় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। হামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪৬৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শিশু ১০ হাজারের বেশি। আর নিহত ফিলিস্তিনির ৭০ শতাংশ নারী-শিশু।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে জমা দেওয়া ৮৪ পাতার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৪৮ সালের গণহত্যার যে কনভেশন, তা লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েল ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা এ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। সনদে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজেতে বিরোধের নিষ্পত্তি পাওয়ার এখতিয়ার রয়েছে তাদের।
আরো পড়ুন : কাউন্সিলের মাধ্যমে দুই নেতাকে সরিয়ে দিতে চায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা