নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও বরিশাল : চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলায় অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো তালিকা নেই। কিন্তু সিভিল সার্জন কার্যালয় অভিযান পরিচালনা করলেই তখন অবৈধ হাসপতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সন্ধান মেলে। প্রমাণ মেলে অনিয়মকে ‘নিয়ম’ করে জীবনরক্ষার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনার। এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, গতকাল চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় কতটি অনিবন্ধিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে তার তালিকা তৈরি করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আজ চট্টগ্রাম নগরে কয়টি অবৈধ হাসপাতাল আছে তার তালিকা করতেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা যায়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সব সিভিল সার্জনকে আগামী তিন দিনের মধ্যে অবৈধ হাসপাতাল-ল্যাবের তালিকা তৈরির জন্য বলেছেন। প্রসঙ্গত, ঢাকার একটি হাসপাতালে আয়ান নামের এক শিশু খাতনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এরপর সোমবার উচ্চ আদালত দেশে অবৈধ হাসপাতালের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরকে। জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৫৮০টি। তবে চট্টগ্রাম নগরে নিবন্ধিত হাসপাতাল-ল্যাব আছে ২৯০টি। এর মধ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে ৯৮টি এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে ১৯২টি। প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত হাসপাতাল-ল্যাবের সংখ্যা ৫০টি। জনস্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা নেই। অথচ তাদের উদ্যোগেই পরিচালিত অভিযানে অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, আমাদের সংগঠনে অনিবন্ধিত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। জানা যায়, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরে লাইসেন্স নবায়ন না করায় চট্টগ্রামের ৩৮টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিল করে পরিবেশ অধিদফতর। পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ৯টি প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র পায়।
বরিশালে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চলছে বহু ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক : বরিশাল নগরী এবং জেলার প্রত্যন্ত এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বহু ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার অনেকাংশ চলছে কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। এসব অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যবিভাগ কালেভদ্রে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে তালিকা পেলে অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সিলগালা করে দেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা ১৮১টি। এর মধ্যে নানা কারণে ছয়টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের কাগজপত্র নবায়ন করেনি। ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। জানা যায়, একটি ক্লিনিক চালাতে সাত ধরনের লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকোটিক, ফায়ার সার্ভিস এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা লাইসেনন্সসহ অনলাইনে আবেদন করলে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক কার্যালয় থেকে ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতাসহ হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক মালিকদের।
অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক থেকে স্বাস্থ্যবিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসোহারা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের মালিকদের বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা। তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নোটিস করা হলে উল্টো তারা স্বাস্থ্যবিভাগকে চোখ রাঙায়, হুমকি দেয়।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মরিয়া হাসান জানান, যথাযথ নিয়মে আবেদন করলে সহজেই ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্স পাওয়া যায়। অননুমোদিত এবং অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানের পরও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিভাগের লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চলছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে সারা বছর অভিযান চালানো হয়। স্বাস্থ্যবিভাগকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান জোরদার করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। জেলার ১০ উপজেলা ছাড়াও বরিশাল মহানগরীতে রয়েছে ৪৯টি ক্লিনিক। এর মধ্যে কয়েকটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন : রূপগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে থাকায় দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর আগুন