বিশেষ প্রতিনিধি: চরম অনিয়মের কারণে বন্ধ হওয়া জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের আজ বুধবার ভোটগ্রহণ হবে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। গত ১২ অক্টোবর এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণে যেসব প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, আজ তাঁদের বদলে ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১৪৫ জন নতুন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা সবাই প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা এবং তাঁদের আনা হয়েছে পাশের পাঁচটি উপজেলা থেকে।
পোলিং অফিসার থাকছেন স্থানীয়রাই। তবে এ ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার (ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা) মো. ফরিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।
গত ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগের নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা এই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন না। ওই এলাকা থেকে সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পাশের জেলা-উপজেলা থেকে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটা সম্ভব না হলে দেশের যেকোনো স্থান থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আনা হবে।
আজকের ভোটগ্রহণ সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় আরো বলেন, সবগুলো ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকছে। এ জন্য মোট এক হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ঢাকায় নির্বাচন ভবন থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
গতকাল ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, ‘গাইবান্ধা উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধভাবে করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা উপনির্বাচন বন্ধ করা হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে সতর্কতার সঙ্গে গাইবান্ধার প্রতিটি সিচুয়েশন আমরা মনিটর করছি, নির্দেশনা দিচ্ছি এবং অ্যাকশন নিচ্ছি। কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় একেবারে দেব না। জাতির সামনে একটি সুন্দর ইলেকশন উপহার দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ’
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়। গত ১২ অক্টোবর এই আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট চলাকালে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫১টি ভোটকেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়। পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের বাকি ৯৪টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ছিল কি না, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কমিটি ওই প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন আগের রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলাম, একজন এডিসি, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের পাঁচজন এসআইসহ মোট ১৩৪ জন কর্মকর্তাকে অনিয়মের জন্য চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ করে।
এই নির্বাচনে আগের প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু, স্বতন্ত্র নাহিদুজ্জামান নিশান, বিকল্পধারার মো. জাহাঙ্গীর আলম ও স্বতন্ত্র সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ভোটযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নাহিদুজ্জামান।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলা নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০ ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। ভোটকেন্দ্র ১৪৫টি এবং ভোটকক্ষ ৯৫২টি।
কালের কণ্ঠ’র গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ২১ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ র্যাবের আটটি টিম, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশ, আনসার মোতায়েন থাকছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও নতুন করে সাজানো হয়েছে। ইভিএমের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে কারিগরি টিমের সদস্যরা কেন্দ্রে থাকবেন। চরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হবে।
পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বলেছেন, পূর্ণ পেশাদারি নিয়ে দায়িত্বের শতভাগ কাজ করতে হবে। গায়ে পড়ে কারো সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। এটা পেশাদারি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেউ কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে যাবেন না। মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে একজন প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, সাঘাটা ও ফুলছড়ির বেশির ভাগ এলাকা চরাঞ্চলবেষ্টিত হওয়ায় নির্বাচনী কর্মকর্তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটু আগেভাগেই ট্রাক্টর নিয়ে নদীর ঘাটের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। তিনি যে এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন সেখানে যেতে নৌপথে তিন ঘণ্টা লাগবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁদের কিছুটা শঙ্কা থাকলেও প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে চান। ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁরা আগেরবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকবেন।
আরো পড়ুন : বহিঃশত্রুর যেকোনো আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত সেনাবাহিনী