ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী মালামাল ও যন্ত্রপাতি রেলযোগে পৌঁছাতে ২৬ কিলোমিটার রেললাইনসহ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেললাইন প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেলপথ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
তিনি জানান, ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নে নবনির্মিত রেলওয়ে স্টেশনের নাম রাখা হয়েছে ‘রূপপুর’। তিনি আরো জানান, এই রেলপথের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি, মালামাল ছাড়াও ঈশ্বরদী ইপিজেডের প্রস্তুতকৃত মালামাল কনটেইনারের মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো যাবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষ পণ্যবাহী ট্রেনে সহজে মালপত্র আনা-নেওয়া করতে পারবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে।
ঈশ্বরদী-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রেলপথের প্রকল্প পরিচালক পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক জানান, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ চালু হলে রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়বে। ইতিমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেড রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালামাল পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে আনতে চান। আগে ঈশ্বরদী থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন ছিল। এ প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ-ব্রডগেজ (ডুয়েলগেজ) কানেক্টিভ হয়ে গেল। মোংলা বন্দর থেকে ব্রডগেজ লাইনে পণ্যবাহী ট্রেন এখানে আসতে পারবে। আবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিটারগেজ লাইনেও পণ্যবাহী ট্রেন আসতে পারবে। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপযোগিতা অনেক বেড়ে গেল।
রেলওয়ের প্রকৗশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের পহেলা এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলে। ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী বাইপাস টেক অব পয়েন্ট থেকে পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার ব্রডগেজ-মিটারগেজ (ডুয়েলগেজ) রেললাইন নির্মাণ করা হয়। এই লাইনে রয়েছে ১৩টি লেবেল ক্রসিং গেট, ‘বি’ শ্রেণির একটি সুদৃশ্য স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফরম, সাতটি বক্স কালভার্ট। পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল জানান, উদ্বোধনের পর প্রকল্পটি সক্ষমতায় এলে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
পাকশী বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকেই পাকশীতে তৎকালীন ‘সাঁড়াঘাট’ রেল স্টেশনের সন্নিকটে নির্মিত হয়েছিল বরফকল। বরফ পরিবহনের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সে সময় ঈশ্বরদী-পাকশী রুটে পৃথক একটি রেললাইন নির্মাণ করে। পরবর্তী সময়ে পাকশী বিভাগীয় রেলের সদর দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঐ রেলপথ দিয়ে ‘পাইলট’ ট্রেন চলত। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ঐ ট্রেনে সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় চলাচল করত। নব্বইয়ের দশকে ‘পাইলট ট্রেন’ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মূলত এই রেলপথকে ভিত্তি করেই নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : সব স্তরের পেশাজীবীদের জীবনের পরিবর্তন এলেও ভাগ্য বদলায়নি বুড়িগঙ্গার মাঝিদের