‘আপনারা যা চাইবেন, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি, আরও বেশি দেব’

জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি

উন্নয়ন দিয়েছি ওয়াদা দিন নৌকায় ভোট দেবেন ♦ রিজার্ভ কিংবা ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই ♦ রক্ত আর হত্যা ছাড়া দেশকে কিছুই দেয়নি বিএনপি, তাদের কাজ গুজব ছড়ানো কান দেবেন না ♦ আড়াই বছর পর ঢাকার বাইরে জনসভায় বক্তব্য

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচারে নামলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল যশোর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিগত দিনেও দেশের উন্নয়ন করেছি, আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করব। কাজেই ওয়াদা দেন, আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা দুই হাত তুলে আগামীতেও নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন। ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’ জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বলে বক্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে যশোর জেলা নেতারা বেশকিছু দাবি করেন, এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যা চাইবেন, আমি তার চেয়ে বেশি করেছি, আরও বেশি দেব’।

যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রথম ঢাকার বাইরে জনসভা করেন। গোটা মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। পাশের ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। গোটা শহর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে।
রিজার্ভ এখনো পর্যাপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, রিজার্ভ থেকে যেটুকু খরচ হয়েছে, তা মানুষের উন্নয়নেই হয়েছে। আমি দেখি, কেউ কেউ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই। রিজার্ভ নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জানতে চান রিজার্ভ কোথায় গেল, তাদের বলছি, রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, দাম বেড়েছে সবকিছুর। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যের ঘাটতি না হয়। কারও কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে না হয়।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে জনসভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পীযূষ ভট্টাচার্য, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শেখ জুয়েল এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য আমিরুল আলম মিলন, ইকবাল হোসেন অপু, পারভিন জামান কল্পনা, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, শেখ আফিল উদ্দিন, কাজী নাবিল আহমেদ, মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।

দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর স্থানীয় ও পাশর্^বর্তী জেলা থেকে আসা দলীয় এমপি, নেতা, সহযোগী সংগঠন ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অভিবাদন জানান। এ সময় পুরো স্টেডিয়াম ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ‘তুমি বাঙালির নয়নমণি’সহ বিভিন্ন সংগীত পরিবেশন করা হয়। এর আগে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে যশোরে পৌঁছে সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি যশোরে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন) ২০২২’ এ যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে সকাল থেকেই নেতা-কর্মী আর সমর্থকদের মিছিলের স্রোত এসে জমতে শুরু করে যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে। দুপুর ১২টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো এলাকা। জনসমুদ্র স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয় পাশের বিভিন্ন এলাকা ও সড়কে। যেন পুরো যশোর শহর বিশাল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্থানীয় নেতা ও জনগণ বলছিলেন, দীর্ঘদিন পর যশোরবাসী এই জনস্রোত দেখল। বৃহত্তর যশোরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ জনসভায় যোগ দেন। পুরো সমাবেশস্থল উৎসবে রূপ নেয়। রং-বেরঙের পোশাক, ক্যাপ, গেঞ্জি পরে ব্যান্ড পার্টির তালে তালে মিছিল নিয়ে জনতা প্রবেশ করে স্টেডিয়ামে। গতকাল পুরো যশোর জেলা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে।

লাখ লাখ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী যশোর-খুলনাসহ সারা দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। রিজার্ভসহ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ যশোর স্টেডিয়াম ভেঙে নতুন ১১ স্তরবিশিষ্ট গ্যালারি তৈরি করে দেওয়া হবে। তাই তরুণ সমাজকে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে হবে। যুব সমাজ আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ। ফলে মাদক, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ছিল ইতিহাস বিকৃতি আর হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্র। হাজার হাজার সেনা-বিমান বাহিনীর অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যাকান্ডে ছিল খুনি জিয়া-মোশতাক। বিচার চাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। মা-বাবা-ভাই হারিয়েও বিচার চাইতে পারব না! তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি বাংলার জনগণের কাছে। একটাই কারণ- এই জাতির জন্য আমার বাবা সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েই বারবার ক্ষমতায় এসেছি। তাই এত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছে। যেখান থেকে বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আর বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকতে কী দিয়েছিল? দিয়েছে অস্ত্র-খুন-হত্যা। এই যশোরে শামসুর রহমান ও মুকুলকে হত্যা করা হয়েছে, খুলনায় মঞ্জুরুল ইমাম, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুুসহ সাংবাদিকদের একে একে হত্যা করা হয়েছে। আর নিজেরো লুটপাট করেছে।

বিএনপির কাজই হচ্ছে গুজব ছড়ানো : প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করার অপরাধে সাত বছরের জেল আর ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। অস্ত্র চোরকারবারি করতে গিয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে ধরা খেয়েছে। সেখানেও সাজা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত। যে দলের নেতা সাজাপ্রাপ্ত তারা জনগণকে কী দেবে? তিনি বলেন, গুজবে কোনো কান দেবেন না। বিএনপির কাজই হচ্ছে গুজব ছড়ানো। ওরা নিজেরা তো কিছু করতে পারে না। ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে খেয়েছে।

রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই : প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। কিন্তু বাংলাদেশের এখনো অর্থনীতিকে আমরা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। অনেকেই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই। অনেকে বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা নেই’। ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখলে তো চোরে নিয়ে যাবে। চোরের জন্য সুযোগ করে দেওয়া। ব্যাংকে টাকা নেই কথাটি ঠিক না। গতকালও আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমাদের এই বিষয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রত্যেকটি ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে। আমদের রেমিট্যান্স আসছে। বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ট্যাক্স কালেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী আছে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নয়নশীল দেশ : সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নয়নশীল দেশ। আমরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। ২ কোটি কৃষক সেই উপকরণ কার্ড পেয়েছে। ১ কোটি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাদের টাকা তাদের কাছে চলে যায়। ৯০ টাকায় সার কিনে ১৬/১৭ টাকায় আমরা দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ, এমনকি উন্নত দেশও করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মান সব দেশে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে। আর আমরা ভ্যাকসিন কিনে বিনা পয়সায় আপনাদের দিয়েছি। করোনা মোকাবিলায় বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সিরিঞ্জ, ভ্যাকসিন যা যা দরকার এনেছি। এ জন্য কোটি কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি। অনেকে আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে যে রিজার্ভ গেল কোথায়। রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। তিনি বলেন, যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬০০ ডলার। তারপর আমরা কিনে এনেছি আমাদের দেশের মানুষের জন্য। গম, ভুট্টা, সার, প্রত্যেকটি জিনিসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি যাতে খাদ্য ঘাটতি না দেখা দেয়। এ জন্য আমি জমি অনাবাদি না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।

দেশের কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন দেশের একটি মানুুষও গৃহহীন থাকবে না। তিনি যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, সেই পথ ধরে সারা দেশে গৃহহীনদের তালিকা করে বিনা পয়সায় জমিসহ ঘর করে দিয়েছি। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে, যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না। এই দেশের কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সময় ৪০ ভাগ দরিদ্রতার হার ছিল। এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

যশোরে আমার নাড়ির টান আছে : যশোরে জনসভা করতে পেরে আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় বাইরে জনসভা করতে পারিনি। আজকে আমার প্রথম জনসভা এই যশোরে। যে যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানকার মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, এখানে আসা যায়নি। আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।

যশোরে উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে নির্মাণ হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি পার্ক, যেখানে দেড় থেকে ২ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। যশোরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া এসে অনেকগুলো বন্ধ করে দেয়। আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছি। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা সবগুলোর উন্নয়নে কাজ করেছি। সাক্ষরতার হার যেখানে বিএনপির সময় ৪৫ ভাগ ছিল সেটিকে আমরা ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি।

পদ্মা সেতু ও মধুমতী সেতু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যশোর বিমানবন্দরকে আরও আধুনিকায়ন করার কথাও জানান। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে মোংলা সমুদ্রবন্দরের কার্র্যকারিতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখন ঢাকা থেকে অনেক মাল চট্টগ্রামে যায় না, মোংলা বন্দরে যায়। এটা কিন্তু ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এসে সেটা আবার চালু করেছি। অভয়নগরে ইপিজেড করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জমি নেওয়া হয়ে গেছে। ৫০০ একর জমি আমরা নিয়েছি। সেখানে ৪০০টা শিল্প প্লট হবে। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানে যে স্থলবন্দর, যেহেতু এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান হবে। শুধু চাকরির পেছনে ছোটা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল, খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া, যশোর-খুলনা-মোংলা এই রাস্তাগুলো সব জাতীয় সড়কে উন্নীত করে দিচ্ছি এবং পদ্মা সেতু থেকে যাতে যশোরে সরাসরি আসতে পারে। ভাঙ্গা-যশোর রাস্তাও মহাসড়কে উন্নীত হবে। ২০১০ সালে যশোরে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এখন চলমান আছে।

দলীয় নেতাদের বক্তব্য : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যশোর ও খুলনার মানুষ প্রস্তুত হন, বিএনপির সঙ্গে ডিসেম্বরে খেলা হবে। খেলা হবে তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে বড় বড় লোকেরা বাড়ির সামনে কুকুর রাখেন। লেখা থাকে সেই কুকুর থেকে সাবধান। আমরা বলি বিএনপি থেকে সাবধান। তারা যখন ক্ষমতায় তখন বিদ্যুৎ, রিজার্ভ, গণতন্ত্র গিলেছে। ভোট চুরি করেছে। তারা যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারে, গোটা দেশ গিলে খাবে।

শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, আজকের এই বিশাল জনসভা প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। পুনরায় আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হেলাল বলেন, বাংলার মানুষ, বিশেষ করে বৃহত্তর যশোরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা নেত্রীর সঙ্গে ছিলেন দুর্দিনে। আগামী নির্বাচনেও আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে জয়ী করবেন।

আরো পড়ুন : টানা পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করে অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়ল রোনালদো

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। তারা জঙ্গিদের নিয়ে দেশটাতে সন্ত্রাস-সহিংসতা করে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। আমরা সেগুলো মোকাবিলা করে দেশকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি করে দেশের উন্নয়ন অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। ব্যস্ত রয়েছি দেশ গড়তে, দেশের উন্নয়নে। আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, যশোরেও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। শান্তির জন্য আগামীতেও নৌকায় ভোট দিন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে, হুংকার দিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বরের পর এতিমের টাকা মেরে খাওয়া খালেদা জিয়ার কথায় নাকি দেশ চলবে! এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নেমেছে, তখন তারা ব্যাকফুটে চলে গেছে। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশকে আর খুনি-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য বানাতে দেওয়া হবে না। যশোর-খুলনাসহ সারা দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।

আরো পড়ুন : বিতর্কের বোমা ফাটাল রোনালদো, তার রেকর্ডের রাতে জয় পেল পর্তুগাল

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *