আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক জাতীয় প্রচ্ছদ শিল্প প্রতিষ্ঠান সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য এবং আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি সংশ্লিষ্ট সার্ভিসেস) খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক বাজার এখন উন্নত বেসরকারি ইকুইটি ও ফিন-টেক সমাধান দিতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় বারো বছর আগে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমি এ জন্য আপনাদের আমাদের অংশীদার হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভার্চুয়াল মিটিংরুম থেকে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আয়োজিত এক যৌথ ব্যবসা পরিষদে (জেবিসি) বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ লাভের দেশ। বাংলাদেশ নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং ব্যক্তির সঙ্গে শাসন, উদ্ভাবন ও বাজারব্যবস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান টেলি-যোগাযোগে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমাদের উৎপাদন উপকরণসমূহকে যুক্ত করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো আছেই। আমাদের যুবকরা উদ্যমী ও উচ্চাভিলাষী।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিতে সরকারের ব্যাপক ও নানা ধরনের উদ্ভাবন, কৃষি-সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশের শ্রমাশ্রয়ী আয় অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।

পরে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য এফবিসিসিআই এবং ইউএই চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন এবং আবুধাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই নিজ নিজ পক্ষে স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইউএইর বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জিওদি, এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, আবুধাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই’ও বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি চমৎকার ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং সব প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ রুটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আমরা জনবহুল ও ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলের মিলনস্থলে রয়েছি। আমাদের একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো রয়েছেই। পাশাপাশি আমাদের নিকটবর্তী অনেক দৃশ্যত সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।

তিনি বলেন, এই সব সুবিধা বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে এবং আমাদের দেশ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পণ্য উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

‘সকলের সাথে মিত্রতা, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই নীতিই আমাদেরকে মুক্ত-বাজার বাণিজ্য ও একটি স্বাধীন অর্থনীতির সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে আমাদের পৃথক করে রেখেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। আমরা চামড়া, পরিবেশ-বান্ধব পাট ও পাটজাত দ্রব্য, খাদ্য ও সবার ওপর আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি এনাবলড সার্ভিসেস)-এ ভালো ও দক্ষ।

বাংলাদেশের ৬৫০ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, বাংলাদেশ উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেটের জন্য পূর্ণ স্পেকট্রাম পাচ্ছে। এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, বাংলাদেশের জনশক্তি আমাদের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আমাদের হাই-টেক পার্কগুলো এখন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে তাদের নিজ দেশ হিসেবে বেছে নিতে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ হিসেবে তুলে ধরতে নীতিগত ও অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি, পরিচালক ও প্রশাসনিক সেবা প্রদানকারী এবং আইসিটি ডেভেলপাররা বিশ্বের যেকোনো স্থানে আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাতে আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে। বিশ্বের অল্প যে কয়েকটি দেশে বৈশ্বিক মহামারিকালেও অর্থনীতি সচল ছিল বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। স্পষ্ট দৃষ্টি, দূরদর্শী পরিকল্পনা, সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আমাদের কঠোর-পরিশ্রমী জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রম ও লড়াকু উদ্যোক্তাদের কারণে বাংলাদেশের এই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আজ বাংলাদেশ একটি ‘উন্নয়নের জাদু’ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা খুব শিগগিরই আমাদের ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত করতে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া।

সূত্র : বাসস।

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *