ইয়াবা না পেলে নিষিদ্ধ `টাপেন্টাডল’ ব্যবহার করছে মাদকসেবীরা

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ মনোকথা শিল্প প্রতিষ্ঠান

ব্যথানাশক ট্যাবলেট টাপেন্টাডল। এই ওষুধ বছর পাঁচেক আগে মাদক হিসেবে ব্যবহার হওয়া শুরু হয় দেশে। বিষয়টি জানাজানি হলে এটি মাদকের তালিকাভুক্তও করা হয়। আইন অনুযায়ী ‘খ’ শ্রেণির এই মাদক উৎপাদন এবং বিক্রয় বন্ধ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। কিন্তু মাদক হিসেবে বাজারে রয়েই গেছে এই ট্যাবলেট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নিষিদ্ধ এই টাপেন্টাডল এখন ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে মাদকসেবীরা। শহরের চেয়ে গ্রামে এর চাহিদা বেশি।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা টাপেন্টাডলসেবী এক তরুণকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেন। ওই তরুণ জানায়, ইয়াবার দাম অনেক বেশি। সব সময় পাওয়াও যায় না। টাপেন্টাডল অনেকটা ইয়াবার মতোই এবং ওষুদের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়। এর স্বাদ খুব বাজে হলেও ইয়াবা না পেলে এটিই ব্যবহার করে অনেক মাদকসেবী।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা বা বিভাগীয় শহরগুলোর চেয়ে গ্রামগঞ্জে মাদক হিসেবে টাপেন্টাডলের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। অভিজাত শ্রেণির চেয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মাদকসেবীরা এই ট্যাবলেট মাদক হিসেবে বেশি ব্যবহার করছে। পাড়া-মহল্লার ফার্মেসিগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এই ট্যাবলেট।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, টাপেন্টাডলকে আইন করে মাদকের তপশিলভুক্ত করার পর দেশের নামিদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো তা আর উৎপাদন বাজারজাত করছে না। তবে চাহিদা থাকায় নানা নামে ছোট ছোট কিছু প্রতিষ্ঠান এর বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে।

ফার্মেসিগুলোতে নজরদারি না থাকায় তা বিক্রিও হচ্ছে। তবে দেশে এর উৎপাদন বন্ধ থাকলেও প্রতিবেশী দেশে টাপেন্টাডল নিষিদ্ধ নয়। সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে এই ট্যাবলেট ঢুকছে দেশে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার মাদকসেবীদের কাছে এই ট্যাবলেট জনপ্রিয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো-দক্ষিণ) সহকারী পরিচালক সুব্রত সরকার শুভ বলেন, ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ক্রমেই টাপেন্টাডলের ব্যবহার বাড়ছে। রাজধানীতেও বিভিন্ন সময় এই নিষিদ্ধ ট্যাবলেটের চালান ধরা পড়েছে। ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে টানা অভিযানের পর টাপেন্টাডলের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যায়। তবে এর বিস্তার ঠেকাতেও জোরালোভাবে কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরেই ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে মাঠে কড়া নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইয়াবার বড় চালান ধরা পড়ার পর এই মাদকের বিকল্প হিসেবে টাপেন্টাডলসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধের দিকে ঝুঁকে পড়ে মাদকসেবীরা। ইয়াবার চেয়ে দামে কম হওয়ায় মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভয়াবহ টাপেন্টাডল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, নিয়মিত মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অনেক সময় অনেকের ঘাড় ব্যথা করে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে ব্যথানাশক ট্যাবলেট সেবন করে। একপর্যায়ে কেউ কেউ এই ট্যাবলেটে আসক্ত হয়ে নিষিদ্ধ টাপেন্টাডলে ঝুঁকে পড়ে। অনেকে অসৎসঙ্গে জড়িয়ে যায় এই মাদকে।

এই কর্মকর্তা বলেন, পুরোপুরি নজরদারি না হওয়ায় নিষিদ্ধ হলেও টাপেন্টাডল জাতীয় ট্যাবলেট বাজার থেকে একেবারে উঠে যায়নি। দামে কম হওয়ায় সবার নাগালে থাকে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

জানা যায়, কোম্পানি ভেদে একেকটি ট্যাবলেটের দাম ১২ থেকে ১৭ টাকা ছিল। তবে মাদক হিসেবে ব্যাপক অপব্যবহারের কারণে বাজারে এখন তা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ হোসেন বলেন, টাপেন্টাডলসহ বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ শরীরের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর। টাপেন্টাডলে যেসব উপাদান রয়েছে, সেগুলো শরীরের ক্ষতি এবং মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায়। স্বাভাবিকভাবে এসব ওষুধ ব্যবহার করলেই বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে এটি কিডনি ও লিভার বিকল করে দিতে পারে। নেশা হিসেবে কেউ এগুলো প্রতিনিয়ত গ্রহণ করলে অকালমৃত্যু অবধারিত।

আরো পড়ুন : বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর নগরীর তালিকার শীর্ষে ঢাকা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *