উপ-সহকারী কর্মকর্তা মনে হয় নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস

অনুসন্ধানী অর্থনীতি দুর্নীতি প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা: জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের ভূমি অফিস যেন উপ-সহকারী কর্মকর্তা সোলাইমান হকের বাড়ি। এক টেবিলে তার ভাই সেলিম বসে খতিয়ান খুলে টাকা নিচ্ছেন, অন্য টেবিলে তার বোনজামাই বাদশা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি খুঁজে খুঁজে বের করে গ্রাহকদের খারিজের আবেদন করে দিচ্ছেন। অপর কক্ষে ভূমি অফিসের দালাল বলে চিহ্নিত রেজাউল করিম ল্যাপটপে কাজ করছেন। এসব চিত্র দেখা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

অভিযোগ উঠেছে, বালিজুড়ি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সোলায়মান হক অফিসিয়াল নিয়মনীতি না মেনে অফিসকে নিজের বাড়ি বানিয়েছেন। দালালের সিন্ডিকেট তৈরি করে সেবা নিতে আসা মানুষের নামজারি, খাজনা খারিজসহ বিভিন্ন কাজের জন্য সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার এসব অপকর্মে অতিষ্ঠ সেবা নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের।

বালিজুড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিস খোলা থাকলেও কর্মস্থলে নেই উপ-সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সোলায়মান হক। তবে তার পাশের টেবিলে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে ল্যাপটপ ও অফিসের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন ‘আমি এই অফিসের কেউ নয় আমাকে উপ-সহকারী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এখানে বসতে বলেছেন। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না’ বলেই ওই স্থান ত্যাগ করেন।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ল্যাপটপ ও অফিসের প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে বসে থাকা ওই ব্যক্তিটি হলেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার ভাই সেলিম। তার পাশেই উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার টেবিলে দেখা মিলে বহিরাগত আরও এক ব্যক্তির। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনিও বলেন, ‘আমিও অফিসের কেউ নই। সোলাইমান হক আমাকে নামজারির ফাইল দেখতে বলেছে, আমি শুধু ফাইলগুলো দেখছি এর বেশি কিছু জানি না’ বলে তিনিও অফিস ত্যাগ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সোলায়মান হকের ঘনিষ্ঠ ও স্থানীয় দালাল রেজাউল।

সেবা নিতে আসা আরাফাত হোসেন আরিফ নামে একজন বলেন, আমার শ্বশুর জীবিত থাকা অবস্থায় নামজারির জন্য সোলাইমান হক ১৫ হাজার টাকা নিয়ে এখনো ঘোরাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সেবাপ্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সোলাইমান হকের খুঁটির জোর কোথায়, ঘুরেফিরে একই অফিসে দীর্ঘদিন কীভাবে চাকরি করে। এই কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও তার ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে উদাসীন।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে কড়ইচুড়া ইউনিয়নে যোগদান করেন সোলায়মান হক। ২০০৮ সালে বালিজুড়ী ও ২০১১ সালে চরপাকেরদহ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাকে ইসলামপুর উপজেলার পলাবন্ধ ইউনিয়নে বদলি হয়েছিল। তিন মাস ওই কর্মস্থলে অবস্থান করে ৯ মার্চ ২০২১ সালে বালিজুড়ী ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি বালিজুড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এখনো

অভিযুক্ত ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সোলায়মান হক বলেন, যারা অফিসে কাজ করছে তারা সকলে আমার লোক। আমার কাজের সুবিধার্থে তাদেরকে রাখা হয়েছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন : আত্মবিশ্বাস থাকলে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না ড. ইউনূস

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *