রংপুর ব্যুরো : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আসাদুজ্জামান বাবলু মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রথম গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান। ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। এবার রংপুর-১ আসনের দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাজিমাত করলেন আসাদুজ্জামান বাবলু।
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এই নেতার চমকে আনন্দ উৎসবে ভাসছে এখন গঙ্গাচড়া।
জানা যায়, পড়াশোনা শেষ করেই ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন থেকে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান বাবলু। নিরলস পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। নিজ ইউনিয়ন ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার জনপ্রিয়তা। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তার পদত্যাগ গ্রহণ করা হয় না। এ কারণে সেইবার অংশ নিতে পারেননি। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আর অংশ নেননি।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগে থেকে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামেন এই নেতা। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামেন। তফশিল ঘোষণার আগে থেকেই তিনি গণসংযোগ, বিভিন্ন ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গিয়েছেন ভোটারদের কাছে। বিশেষ করে যুবকদের আকৃষ্ট করেছেন বাবলু। এর ফলে গঙ্গাচড়ার যুবদের সংগঠন যুবমঞ্চ বাবলুকে সমর্থন জানান।
রংপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর-১ আসনটি গঙ্গাচড়া উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জেলার সর্বোচ্চ ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তারা হলেন- হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (জাতীয় পার্টি), বর্তমান সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা (স্বতন্ত্র), আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান বাবলু (স্বতন্ত্র), বখতিয়ার হোসেন (বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি), বদরুদ্দোজা চৌধুরী (তৃণমূল বিএনপি), সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগদান করা শাহিনুর আলম (স্বতন্ত্র), হাবিবুর রহমান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) ও শ্যামলী রায় (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রউফ নির্বাচিত হন। এরপর দুবার বিএনপি ও টানা ৮ বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির ময়েন উদ্দিন সরকার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গঙ্গাচড়াবাসীর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসে রংপুর-১ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের পর এলাকার কেউ খোঁজ-খবর রাখেননি। তাই তিস্তা নদী বিধৌত গঙ্গাচড়ার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। এবার সেই আশা পূরণ হলো এলাকাবাসীর।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের চাঁন মিয়া, মহুবর মিয়া, সাজু মিয়া, শাকিল খান বলেন, বাবলু ভাই উপজেলার মানুষের বিপদে-আপদে পাশে ছিলেন। তাকে দিনে-রাতে, ঝড়-বৃষ্টিতে প্রয়োজনে গঙ্গাচড়ার প্রত্যন্ত চরে ছুটে যান। তাই গঙ্গাচড়ার মানুষ তাকে ভালবাসে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে।
গঙ্গাচড়া যুবমঞ্চের সমন্বয়ক আল আমিন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে গঙ্গাচড়ার মানুষ তাদের সন্তানকে সংসদে পাঠাতে পারেনি। নির্বাচন আসলে রাজনৈতিক দলগুলো জেলা-উপজেলা থেকে প্রার্থীকে নির্বাচন করে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পাঠিয়ে দেয়। সেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে এলাকার খোঁজ রাখে না।
গঙ্গাচড়ার মানুষ খরা, বন্যা, ভাঙ্গন কবলিত। নদী ভাঙ্গা মানুষের কাজের কোন ব্যবস্থা নেই। চরে এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এসব বিষয় নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথা ব্যথা ছিল না। আসন্ন নির্বাচনে তরুণদের আইকন আসাদুজ্জামান বাবলুকে নির্বাচিত করতে পেরেছি আমরা। আশা করি তার হাত ধরে এই এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
রোববার রাতে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। এ ফলাফলে কেটলি প্রতীকের আসাদুজ্জামান বাবলু ৭৩ হাজার ৯২৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট।
আরো পড়ুন : ঝালকাঠিতে ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা