এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রহিম গ্রুপের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যে

ওকে নিউজ স্পেশাল জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ মুক্তমত

বিভিন্ন কলকারখানার কালো ধোঁয়া প্রতিনিয়ত পরিবেশকে দূষণ করছে। সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কারখানা মালিকরা এসব কলকারখানা পরিচালনা করে আসছেন। ঠিক তেমনি পরিবেশ দূষণকারী এক প্রতিষ্ঠান হলো রহিম গ্রুপ। এটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এই রহিম গ্রুপের কয়েকটি মিল-কারখানার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এলাকায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে।

সরেজমিন দেখা যায়, রহিম গ্রুপের রহিম স্টিলসহ বিভিন্ন মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। স্টিল মিল কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না এলাকাবাসীর। এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১৭টি জেলার হাজার হাজার গণপরিবহন, ট্রাকসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এসব পরিবহনের যাত্রীরা কালো ধোঁয়ার বিষাক্ত সংস্পর্শে এসে স্বাস্থ্যহানির মুখে পড়ছেন।

এ ছাড়া মিলটি আবাসিক এলাকাতে হওয়ায় এখানে হাজারো মানুষের বসবাস। রহিম স্টিল মিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কালো ধোঁয়া ও তরল বর্জ্য যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার হাজার হাজার মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। অনেকেই এখান থেকে গিয়ে অন্যত্র বাসা নিচ্ছে। দ্রুত এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চান এলাকাবাসী।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ স্টিল মিলটি হলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ বিষয়টি দেখার কি কেউ নেই? একটি মহাসড়কের পাশে কীভাবে কালো ধোঁয়া ছড়ায় এবং বিষাক্ত তরল বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলা হয়। জাকির হোসেন নামে নয়াবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, কালো ধোঁয়ার কারণে দিন দিন আমাদের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। রহিম স্টিল মিলকে কয়েকবার বিষয়টি জানালেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। উল্টো তারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মিলটি নিয়ন্ত্রণ করায়। যাতে আমরা মিলটির বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করতে না পারি। আবু হানিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমার মতে, পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রহিম স্টিল মিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বহু মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে আছে। আবু তালেব নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জানান, রহিম স্টিল মিলের কালো ধোঁয়ায় ঘরবাড়ি-গাছপালা সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে অসহনীয় জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে আমাদের এলাকায়। কালো ধোঁয়ার কারণে আমাদের পড়াশোনায় অনেক ব্যাঘাত ঘটছে। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন জানান, রহিম স্টিলে আধুনিক পদ্ধতিতে রড উৎপাদন করা হয়। এই স্টিল মিল থেকে কালো ধোঁয়া বের হওয়ার কথা নয়। আর এ নিয়ে এলাকাবাসীরও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অনেকে খারাপ মন্তব্য করতে পারে কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ বি সিদ্দিক জানান, এসব স্টিল মিলের কালো ধোঁয়া পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। এলাকাবাসীর উচিত তাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা। সে জন্য তাদের একত্রে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে হবে। তাতেও কাজ না হলে তাদের উচিত হবে রহিম স্টিল মিলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা। আমাদের যা সাহায্য লাগবে আমরা তা করব।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি (০১৭১২০১৬৮৯৯) রিসিভ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ রাজু বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি।

আরো পড়ুন : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিন উপজেলার ২৬৪টি স্কুল বন্ধ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *