দুঃসহ স্মৃতিগুলো মানুষের মন থেকে মুছে না যেতেই আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে করোনা। ভাইরাসটি এবার আবির্ভূত হয়েছে আরো শক্তিশালী হয়ে। ওমিক্রনের নতুন ধরন ‘বিএফ.৭’ আগেরটির চেয়ে চার গুণ বেশি সংক্রামক। এটির কারণে চীনে আবারো হুহু করে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দেখা দিয়েছে ‘বিএফ.৭’। করোনার চীনা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।
পাশাপাশি সব বন্দরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের স্ক্রিনিং করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব দেশে ওমিক্রন ধরনের বিএফ.৭ উপধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সেই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনের এই নতুন উপধরন বিএফ.৭ অত্যন্ত সংক্রামক। এর সংক্রমণ এড়াতে দেশের সব নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সন্দেহজনক যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে। আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌ বন্দর এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হলো।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনার নতুন যে ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বিএফ.৭; সেটি বিএ৫-এর একটি সাব ভ্যারিয়েন্ট। এটাকে বলা হয় আর১৮, অর্থাৎ এক জন থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। তার মানে অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটার সংক্রমণ ক্ষমতা চার গুণ বেশি। এই ধরন খুব কম সময়ে অনেক বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। এটার উপসর্গ সম্পর্কে যা জানা গেছে; তা অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মতোই। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখনো এটার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়নি, তবে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে টিকা না নেওয়া ব্যক্তির মধ্যে অনেক ভয়াবহ প্রভাব পড়ে।
তাই যারা টিকা নেয়নি তাদের দ্রুত নেওয়ার জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এছাড়া দ্বিতীয় বুস্টার ডোজের (চতুর্থ ডোজ) প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধির বিষয়েও বলেছে কমিটি। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, গর্ভবতী নারী ও ষাটোর্ধ্ব যারা আছেন, তাদের দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, যেহেতু করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আমাদের এখন থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সবার মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
চীনের যে চার নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, তারা ‘বিএফ.৭’ আক্রান্ত কিনা সেটা এখনো জানা যায়নি। শনাক্ত করার জন্য জিনোম সিকোয়েন্সি করতে হয়। এটা আইইডিসিআর করছে। চার/ পাঁচ দিন সময় লাগে। দুই-এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির ৬১তম সভায় সভাপতিত্ব করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
সভায় যে সুপারিশ প্রদান করা হয়। ১. কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনিক্যাল কমিটি সব সময় পর্যালোচনা করছে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরছে। ২. ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/ ৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওয়াতায় আনার ব্যাপারে সব প্রকার জনসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. ফাইজার তাদের ৯ মাস মেয়াদি ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১২ মাস এবং ১২ মাস ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১৫ মাস বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, যা দেশে বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে দেওয়া হচ্ছে বলে কমিটি মনে করে। ৪. আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড-১৯-এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ৫. পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। ৬. দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন।
আরো পড়ুন : আর্জেন্টিনার অর্ধেক মানুষই মেসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান