দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘ নাটকীয়তা করে গেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। শুরুতে নির্বাচনে যাওয়া, না যাওয়ায় প্রশ্ন। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার পর পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নীরবতা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে নানা সমীকরণ। ২৬ আসনে সমঝোতা, এরপর একে একে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর মিছিল। নানা কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ওপর জমে ক্ষোভ। প্রকাশ্যে দাবি উঠেছে পদত্যাগের। নেতাকর্মীরা অনাস্থা প্রকাশ করছেন চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ওপর। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন, দুই নেতাসহ কয়েকজনের অদূরদর্শিতা ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে খাদের কিনারায় এসে ঠেকেছে দল। তারা চাইছেন দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের সরিয়ে দিতে।
গত বুধবার শপথগ্রহণ করেন জাতীয় পার্টির ১১ সংসদ সদস্য।
এই শপথ নিয়েও ছিল নাটকীয় পরিবেশ। গতকাল ছিল তাদের নিজস্ব বৈঠক। এরপর বৈঠক বাতিল করে ঘোষণা দেয়া হয় বুধবারই শপথ নেবেন তারা। একই সময়ে বনানীস্থ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই দুই নেতার পদত্যাগ দাবি করেন। বেঁধে দেয়া সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের সরাতে একাট্টা নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত তিনটি কারণে নাখোশ তারা। প্রথমত, দলের অনেকেই চেয়েছিলেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করুক। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগে কার্যনির্বাহী সভা করে মতামত নেয়া হয়। এ সময় সিংহভাগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের ওপর বিষোদগার করেন। কিন্তু সকলের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পরও সমঝোতায় যায় দলটি। নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতারা বলছেন, সমঝোতা হওয়ার কারণে তারা ভোট চাইতে পারেননি কারও কাছে। নানা কটু কথা ও বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন।
তৃতীয়ত, সমঝোতা করলেও মাত্র ২৬ আসনে সমঝোতা করা নিয়ে ক্ষোভ আছে নেতাদের মাঝে। আবার এই আসনগুলোতেও রাখা হয় স্বতন্ত্র পার্থী। নেতাকর্মীরা বলছেন, নির্বাচনে গেলেও এত কম আসনে সমঝোতায় রাজি হওয়া ঠিক হয়নি। সেইসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান শেরিফা কাদেরের জন্য ঢাকা ১৮ আসন নিয়ে শেষ পর্যন্ত দেনদরবারকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি তারা।
জাতীয় পার্টি সংসদে মাত্র ১১টি আসনে নির্বাচিত হয়েছে। নেতারা বলছেন, সমঝোতা না করে নির্বাচন করলে এরথেকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ আসন পেতো দলটি। তারা বলছেন, একটিও যদি আসন না পেতো তবুও দলের ভিত শক্ত থাকতো।
হবিগঞ্জ-২ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার পরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা শংকর পাল বলেন, এই নির্বাচনে যাওয়া শুধুমাত্র সরকারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের তো ভোটের মাঠে লড়াই করে জেতার সক্ষমতা নাই। তাই নিজেদের আসন ঠিক রেখে সমঝোতা করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, দু’একজন নেতার লোভের বশবর্তী ও নিজেদের আসন রক্ষার জন্য দলটাকে একেবারে ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেল। সরকার যেভাবে পরিকল্পনা করেছে সেভাবেই করেছে।
এর আগে জিএম কাদের ভারত সফরের সময়ে নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করে গণমাধ্যমে বার্তা দিয়েছিলেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। কিন্তু পরবর্তীতে রওশন এরশাদ বলেন, তিনি নিজেকে জাতীয় কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান দাবি করেছিলেন।
গত বুধবার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ চেয়ে আল্টিমেটাম দেন কো-চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান টেপা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাউকে জোর করে সরাতে চাই না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে এগুতে চাই। চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের এই নেতৃত্বকে আমরা ভালোভাবে দেখছি না। এবারের নির্বাচনটা আমাদের অবস্থান খারাপ করে দিয়েছে। আমরা যদি সমঝোতা না করে নির্বাচন করতাম আর একটা আসনও যদি না পেতাম তবু আমাদের অবস্থান শক্ত থাকতো। এমন অবস্থাতেও তারা কথা বলবেন না, এটাও তো হতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন এই দুই জায়গায় কাকে বসাবে নেতাকর্মীরা এটা সময় বলে দেবে। কিন্তু আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করি আমার এই ইচ্ছা বা শারীরিক সক্ষমতাটাও নেই। আমি চাই মসৃণভাবে দলটা চলুক।
আরো পড়ুন : নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে যে ছয় জন