কিউলেক্স মশার কামড়ে ছড়াচ্ছে এনকেফালাইটিস ভাইরাস, রেড জোনের আওতায় রাজশাহী ও নওগাঁ

জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিউলেক্স মশার কামড়ে ছড়ানো জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে দেশের ৩৬ জেলায়। সংক্রমণে এগিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। গতবছর সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক। ইতোমধ্যে এই দুই জেলাকে রেড জোন তালিকাভুক্ত করে কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত দিনব্যাপী এ কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও বেসরকারি সংস্থা পাথ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর, ইপিআই ও সার্ভিলেন্সের ডেপুটি পরিচালক ডা. জেসমিন আরা খানম, এমএনসিঅ্যান্ডএইচ-এর সাবেক পরিচালক ডা. শামসুল হক, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. শারমিন সুলতানা, পাথের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ডা. কামরান মেহেদি, আইসিডিডিআরবি-এর প্রধান গবেষক ডা. রেবেকা সুলতানা ও সহকারী গবেষক ডা. আরিফা নাজনিন প্রমুখ। কর্মশালায় জানানো হয়, সারা পৃথিবীর মতো করোনাভাইরাস বিদায় না নিতেই দেশে মশাবাহিত রোগ ‘জাপানিজ এনকেফালাইটিস’ ভাইরাস। দেশে গত পাঁচ বছরে ১২ হাজার ১৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩৮৮ জন। চার বছরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৭৯ জনের। সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে রাজশাহী জেলা। মূলত মে থেকে ডিসেম্বর মাসে বেশি সংক্রমণ হওয়া এ ভাইরাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। গ্রামাঞ্চলে মশার বংশবৃদ্ধি হওয়া এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি সংক্রমণ হয়ে থাকে। কর্মশালায় গবেষকরা জানান, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাজশাহী বিভাগে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ। সবচেয়ে কম আক্রান্ত বিভাগ বরিশাল ও সিলেট বিভাগ। এ দুই বিভাগে আক্রান্ত হন মাত্র এক শতাংশ রোগী। এ পরিসংখ্যানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ ও ৯ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হন। জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাস মশাবাহিত ফ্ল্যাভিভাইরাস এবং এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই কারণে সব বয়সের মানুষেরই এনকেফালাইটিস ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁঁকি আছে। এটি ডেঙ্গু, হলুদ জ্বর এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো একই বংশের অন্তর্গত। জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্নায়ুবিক রোগ হয়। তবে এর হার এক শতাংশেরও কম। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এ ছাড়া গুরুতর সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভ করা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মানুষের মধ্যে স্নায়ুবিক এবং মানসিক লক্ষণগুলো অব্যাহত থাকতে পারে। কর্মশালায় জানানো হয়, ইপিআই শিডিউলের আওতায় এ ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা ব্যক্ত করে চিকিৎসকরা জানান, ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ভাইরাসের টিকা অনুমোদন দিয়েছে।

শিগগিরই বাংলাদেশে এই টিকা আসবে এবং প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় জাপানিজ এনকেফালাইটিস ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সবার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব ধরনের সংকট মোকাবিলা করার আহ্বানও জানান চিকিৎসকরা।

আরো পড়ুন : মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের ওপর নজরদারিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ সরকার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *