লালমনিরহাটে হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থী । মেহেরপুর রাজশাহী নওগাঁয় নৌকার ক্যাম্পে আগুন । চট্টগ্রামে এমপির স্ত্রীর ওপর হামলা । কয়েক জেলায় স্বতন্ত্র সমর্থকদের ওপর হামলা, ক্যাম্প ভাঙচুর।
বিশেষ প্রতিনিধি : ক্রমেই সহিংস হচ্ছে নির্বাচনি পরিবেশ। গতকাল লালমনিরহাটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলা, গাড়ি ও অফিস ভাঙচুর হয়েছে। একই দিন রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুরে নৌকার তিন প্রার্থীর ক্যাম্পে আগুন দেওয়া হয়েছে। তিন জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কয়েকটি নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর হয়েছে, সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মীদের মধ্যে। চট্টগ্রামের একটি আসনে নৌকার প্রার্থীর স্ত্রী ও অন্য একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। ময়মনসিংহে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে বৈঠা দিয়ে পিটিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য এবং সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি আতাউর রহমানের ওপর হামলা, গাড়ি ও নির্বাচনি অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। হামলায় প্রার্থী গুরুতর আহত হন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় হাতীবান্ধার গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে তার ওপর হামলা চালান গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল ও তার লোকজন। এ সময় গাড়ি ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল শ্যামলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন আতাউর রহমান প্রধান। তাঁর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট, হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ওই এলাকায় গণসংযোগে গেলে গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী তাদের পথ রোধ করে গণসংযোগে বাধা দেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের ওপর হামলাসহ গাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় শ্যামলকে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত লালমনিরহাট। অন্যদিকে লালমনিরহাট-২ আসনের প্রার্থী সিরাজুল হক অভিযোগ করে বলেছেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর লোকজন তাঁর নির্বাচনি প্রচারকাজে বাধা দিচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, কর্মীদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে তিনিও রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
মেহেরপুরে নৌকার নির্বাচনি অফিস পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা : মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামে গতকাল ভোররাতে নৌকার নির্বাচনি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মী শরীফুল ইসলাম জানান, রাত ১২টার পর তিনি ও তাঁর লোকজন অফিস বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার দেন। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে কে বা কারা এ আগুন দিতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন স্থানীয় লোকজন।
রাজশাহীতে নৌকার ক্যাম্পে আগুন, স্বতন্ত্রের সমর্থককে হাতুড়িপেটা : রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নৌকা মার্কার নির্বাচনি ক্যাম্প আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দীঘায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের এক সমর্থককে নৌকা প্রতীকের কার্যালয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১টার পর চারঘাট মডেল থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের বড় ভাই মো. উজির আলী। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ফয়সাল ও বাপ্পি নামে দুজনকে পুলিশ রাতেই গ্রেফতার করেছে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী গ্রামে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এমপি এনামুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী আতাউর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন কাঁচি মার্কার পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। এ সময় গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকারের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে আতাউরসহ কাঁচি মার্কার কর্মী-সমর্থকদের মারধর করেন। তবে চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছিলেন। তারা বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা হয়।
নওগাঁয় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর : নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একে অন্যের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের ঘটনায় থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গতকাল বিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পোরশা উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া মোড়ে তাঁর নির্বাচনি ক্যাম্পের বাইরে লাগানো ব্যানার- ফেস্টুন বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ছিঁড়ে ফেলে এবং ক্যাম্প ভাঙচুর করে। বাধা দিতে গেলে তাঁর সমর্থক উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরও বলেন, খাদ্যমন্ত্রীর লোকজন তিন উপজেলার সব স্থানে তাঁর পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে। এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন শাহ বলেন, ‘নৌকার সমর্থকরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালাচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও কর্মীদের মারধরের যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। উল্টো বৃহস্পতিবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরাই তাঁতিপাড়া মোড়ে ভটভটিতে চড়ে যাওয়ার সময় আমাদের কর্মীদের মারধর করে এবং ঘাটনগরে নৌকার একটি নির্বাচনি ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে এমপি নদভীর স্ত্রীর ওপর হামলা : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার চরতিতের কাটাখালী ব্রিজ এলাকায় চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পক্ষে স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী গণসংযোগ করতে গেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় নদভীর শ্যালক চরতী ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানসহ পাঁচজন আহত হন। অন্যদিকে গতকাল দুপুরে মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের কর্মী মোহাম্মদ অপুকে পোস্টার লাগানোর সময় মারধর করার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান রুহেলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে বৈঠা দিয়ে পেটাল নৌকার সমর্থকরা : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক সাদেক হোসেন ভূঁইয়া নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তিনি উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে তাকে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাদেক। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত সাদেক জানান, বুধবার রাতে তিনি সুন্দাইল গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আবেদীন খানের পক্ষে পোস্টার-ব্যানার বিতরণ করছিলেন। এ সময় নৌকার প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালামের সমর্থকরা তার ওপর হামলা করেন।
মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে ককটেল হামলায় মামলা : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগমের ঈগল প্রতীকের মিছিলে ককটেল হামলার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজীর ভাই মোফাজ্জেল কাজী বাদী হয়ে কালকিনি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুস সোবাহান গোলাপের পক্ষ নিয়ে ফজলু বেপারীর লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
শৈলকূপায় সহিংসতায় নৌকার ১৫ কর্মী গ্রেফতার : ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় নৌকার ১৫ কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রয়েড়া বাজারে নৌকার একটি মিছিল থেকে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সিঙ্গাপুরপ্রবাসী খায়রুল বিশ্বাসসহ তিন কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়। শৈলকূপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজুল ইসলাম জানান, গতকালের সহিংসতার ঘটনায় আহতদের পরিবার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। এজাহারনামীয় ১৫ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের পথসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকালে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের শিরিরগুঁড়ি গ্রামসহ কয়েকটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শ্রীপুর থানা পুলিশ ও সহকারী কমিশনার ভূমি আল মামুন।
ঝিনাইদহ : নৌকার বিপক্ষে কেউ ভোট করলে তাকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প-বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও দুধসর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন সাবু। গতকাল বিকালে ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুুল হাইকে বিজয়ী করার জন্য দুধসর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। পরে এ বক্তব্যের ব্যাপারে সাহাবুদ্দিন সাবুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বক্তব্যের মধ্যে কখন কী বলেছি আমার মনে নেই। তবে বেশি খারাপ কিছু বলিনি।’
আরো পড়ুন : আগাম জামিন দিল বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিনসহ ৮ আইনজীবীকে