নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে দাফনের জন্য লাশের গোসল দেওয়ার সময় মৃতদেহের গলায় কালো দাগ দেখা দেওয়ার ঘটনার প্রাথমিক রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার নিহত ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী লিমা আক্তার ও তাঁর খালাতো ভাই পুলিশের কাছে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ইসমাইলকে মারধর করে গলায় রশি পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেসনোটে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বেগমগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় নিহত ইসমাইলের স্ত্রী লিমা আক্তার (২২) ও লিমার খালাতো ভাই মাইন উদ্দিনকে (৩২) গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলার অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ইসমাইল হোসেনের বাবা মো. ছায়েদুল হক বলেন, গত রোববার রাতের খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর প্রবাসী ছেলে ইসমাইল স্ত্রীসহ থাকেন আলাদা ঘরে। দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ছেলের ঘর থেকে পরপর দুটি আওয়াজ শোনেন। কিন্তু কিসের আওয়াজ, ঠিক বুঝতে পারেননি। কিছু সময় পর তাঁর পুত্রবধূ এসে জানান, ইসমাইল মেঝেতে পড়ে আছেন। তখন তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা ওই ঘরে গিয়ে দেখেন, তাঁর ছেলে ঘরের মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। শরীর ছুঁয়ে দেখেন, ঠান্ডা বরফের মতো হয়ে আছে। তাৎক্ষণিক তাঁরা তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চৌমুহনীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রেসনোটে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে লিমা আক্তার এলোমেলো ও অসংলগ্ন কথা বলায় পরিবারের লোকজন পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ দাশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ইসমাইল হোসেনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এ সময় ইসমাইলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও গলার সামনের অংশে কালচে দাগ দেখা যায়। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে তিন বছর আগে লিমা আক্তারের বিয়ে হয়। অপর দিকে মাইন উদ্দিন লিমার খালাতো ভাই। বিয়ের পর লিমা তাঁর খালাতো ভাই মাইন উদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি পারিবারিকভাবে আত্মীয়স্বজনেরা সমাধান করেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ইসমাইলের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। যার জেরে লিমা আক্তার তাঁর খালাতো ভাই মাইন উদ্দিন ও অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই থেকে তিনজনের সহায়তায় ইসমাইলকে এলোপাতাড়ি মারধর করে মাথায় জখম করেন। একপর্যায়ে আসামিরা ইসমাইলের গলায় রশি পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
জেলা পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরকীয়ার সম্পর্কের জেরে প্রবাসী ইসমাইলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। জড়িত অপর আসামিদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় ইসমাইলের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় লিমা ও মাইন উদ্দিনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।