নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রায় আধা ঘণ্টা নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে বসে বিএনপির গণমিছিল দেখলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। পুরো সময় জুড়ে তিনি ওই মিছিল নজরে রাখেন। শনিবার বিকাল ৪টায় শহরের চাষাঢ়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে শনিবার বিকাল ৪টায় গণমিছিল বের করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি।
মিছিলকে কেন্দ্র করে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শহড়জুড়ে গণমিছিল করেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির মিছিলের কথা শুনে শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থান নেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। বিএনপির মিছিলটি শহরের মিশনপাড়া পূর্ব দিক থেকে আসে। আর এমপি শামীম ওসমানের গাড়ি শহরের চাষাঢ়ার একটি ফার্মার সামনে থেকে পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ায়। ওই সময় শামীম ওসমানও তার গাড়ির চালক ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ছিল না।
এদিকে, শামীম ওসমানের উপস্থিতি দেখে মিশনপাড়া থেকে আসা মিছিলটি শহরের খাজা সুপার মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। যদিও মিছিলটি ২নং রেলগেট যাওয়ার কথা ছিল। শামীম ওসমান গাড়ির গ্লাস খুলে মিছিলটি দেখেন। শামীম ওসমানকে দেখে মিডিয়াকর্মীরা ছুটে গেলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত শামীম ওসমানের বিএনপির মিছিল দেখে অবস্থান নেওয়া নিয়ে পুরো শহরে চলছে আলোচনা। ঘটনার সময় উৎসুক জনতার ভীড় জমে যায় ঘটনাস্থলে। কি কারণে শামীম ওসমান বিএনপির মিছিল দেখে অবস্থান নিয়েছেন এ প্রশ্ন ছিল প্রায় সকলরেই। কেননা সম্প্রতি এমপি শামীম ওসমান ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ও যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে মাঠে থাকবেন তিনি।
অপরদিকে, পূর্বঘোষিত বিএনপির গণমিছিল চলাকালে চাষাঢ়ায় অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় এমপি শামীম ওসমান জানান, ‘বিএনপি ইদানীং মিছিল-মিটিংয়ে খুবই উশৃঙ্খল মন্তব্য করছে। খুবই নোংরা ভাষা ব্যবহার করছে। পুলিশের উপর হামলা করেছে। একজন মানুষ মারা গেছে। এতে করে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না। জনতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিও ক্ষিপ্ত বিএনপির উপর। তারা বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু আমাদের নিজ দলের বা স্বাধীনতার স্বপক্ষের কেউ যাতে রেগে গিয়ে উল্টা-পাল্টা কিছু না ঘটাতে পারে। তাই দাঁড়িয়ে আছি। বিশৃঙ্খলা-অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষের জানমালের সম্পদের হানি হতে পারে। এগুলো রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। বিএনপি মিছিল করবে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই বলে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে তারা যে ভাষায় কথা বলে, এটাও রাজনৈতিক শিষ্টাচার না।’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রচুর নির্যাতনের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সিদ্ধিরগঞ্জেই ৭ থেকে ৮ জন নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে হামলা করেছে। আমার ভাইয়ের কারখানায় ভাংচুর-জ্বালাও-পোড়াও করেছে। গরুর বান কেটেছে। আমরা গত দুই নির্বাচনী আমলে সহঅবস্থানে আছি। বিএনপি কেন কোন দলই বলতে পারবে না। আমরা কারো উপরে হামলা ও মামলা করেছি। সব সময়ই সহঅবস্থান ছিল। শৃঙ্খলা রক্ষায় যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। আমরা কোথাও কোন প্রতিশোধ নেই নাই। নারায়ণগঞ্জ বিগত সময়ে শান্তিপূর্ণ ছিল। তাই বিএনপির কাছে অনুরোধ থাকবে। রাজনীতি করা সবার অধিকার আছে। আপনারা গণতান্ত্রিক ভাবে করেন। গণতান্ত্রিক ভাষা ব্যবহার করেন।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে কোনো ধরনের বাধা দেব না। তবে তারা যদি কর্মসূচির নামে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন : ২০২০ সালে নরসিংদী গণধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী আর বেঁচে নেই