চাচার আশ্রয়ে সুরজলের নিষ্পাপ তিন সন্তান

প্রচ্ছদ মনোকথা শিশু অধিকার শিশু/কিশোর

নেশাগ্রস্ত ও হতাশা থেকেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন সরজুল! ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে তাদের দাফন করা হয়। এদিকে সরজুলের নিষ্পাপ তিন সন্তান চাচার আশ্রয়ে রয়েছে।

পুলিশ এ বিষয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছে। একটি হত্যা মামলা এবং একটি অপমৃত্যু মামলা। এছাড়া এ ঘটনায় আত্মহত্যাকারী সুরজল হক ছাড়াও অন্য কারো প্ররোচনা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনজনের মৃত্যু নিয়ে নানা মতামত ভাইরাল হয়েছে।

অপরদিকে সুরজল হকের নিষ্পাপ তিন শিশু জিহান (৭) শিরিন (৪) ও আইরিন (২) এখনো বুঝতে পারেনি তাদের বাবা ও মা আর বেঁচে নেই। তাদের ঠাঁই হয়েছে তাদের বড় চাচা নুরুল হকের ঘরে।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাদিশাল গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে চুনারুঘাট থানা পুলিশ স্বামীর লাশ গাছে ঝুলানো, স্ত্রীর লাশ খাটের নিচে এবং ও সন্তানের লাশ তীরে ঝুলানো অবস্থায় উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় লাশ পৌঁছে উপজেলার গাদিশাল গ্রামে।

শুক্রবার দিনভর এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। বাদ যায়নি সোশ্যাল মিডিয়াও। কেই কেউ বলছেন, নেশাগ্রস্থ হয়ে সে তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেছে, আবার কেউ কেউ বলছেন, পারিবারিক অশান্তি এবং অভাব অনটনের কারণে সে তাদের হত্যা করেছে।

তবে নিহতের ভাই নুরুল হক জানিয়েছেন, তার ভাই প্রায়ই নেশা করতো এবং তার স্ত্রীকে মারধোর করতো। এর আগেও সে তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

আত্মহত্যাকারী সুরজল হকের বেঁচে থাকা দ্বিতীয় ছেলে জিহান মিয়া পুলিশের কাছে জানিয়েছে, তার পিতা তার মাকে মারার আগে সিগারেটের সঙ্গে কিছু একটা খেয়েছে।

এসব তথ্যে ধারণা করা হচ্ছে সুরজল নেশাগ্রস্ত হয়ে স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেছে। এছাড়া তাদের পরিবারে অভাব অনটনও ছিল। সরজুলের নিহত স্ত্রী জেসমিন আক্তার তার ১০ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষাও করতেন। তিনি প্রায়ই চুনারুঘাট শহরের মধ্যবাজারেও ভিক্ষা করেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমুরোড হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, সুরজল হক নেশাগ্রস্ত থাকতো এমনটাই এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এছাড়া তিনি হতাশাগ্রস্তও ছিলেন। এলাকার সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল আমিন জানিয়েছেন, সুরজল হক এর আগেও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছে। সে মানসিক রোগীর মতো আচরণ করতেন। তার বিচার হলে আজ এমন হতো না।

এদিকে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও উঠে এসেছে, নেশাগ্রস্ত ও হতাশা থেকেই সুরজল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

চুনারুঘাট মাধবপুর সার্কেল এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সুরজল হক প্রায়ই নেশা করতেন, এলাকাবাসী ও সুরজলের ভাই নুরুল হকও পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো কোনো প্ররোচনা আছে কি না, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া আসলে কিছুই বলা যাবে না। তবে সে তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে এটা প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রাশেদুল হক জানান, পুলিশ বাদী হয়ে এ বিষয়ে দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি আত্মহত্যার অপমৃত্যু মামলা। হত্যা মামলা অন্য কারো প্ররোচনা আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, সুরজল নেশাগ্রস্ত থাকতেন এবং তার পরিবার অসচ্ছল ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পলাশ জানান, সরজুল মানসিক রোগীর মতো আচরণ করতেন। প্রায়ই তিনি তার স্ত্রীকে মারধোর করতেন বলে শুনেছেন।

আরো পড়ুন : সংলাপের আগে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর ফয়সালা করতে হবে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *