চুরির নাটক নয়,পরকীয়া প্রেমিকাকে হত্যা করল শাকিল

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ নারী নারী অন্যান্য নারী নির্যাতন পুরুষ প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

কিশোরগঞ্জ থেকে : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চাঞ্চল্যকর রেস্টুরেন্ট কর্মী রিনা বেগম (৩৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজমান হোসাইন শাকিল (২৩) নামে এক রেস্টুরেন্ট কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় ও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। পরকীয়ায় আসক্ত শাকিলের সঙ্গে রিনা বেগমের কথা কাটাকাটির জের ধরে রিনা বেগম আত্মঘাতী হয়ে উঠলে শাকিল তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে সে রিনা বেগমের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গিট্টু দেয় এবং রিনা বেগমের দুইটি মোবাইল ফোন ও ঘরে থাকা একটি এলইডি টিভি মনিটর নিয়ে পালিয়ে যায়। যেন এলাকার লোকজন মনে করেন, ঘটনাটি চুরির এবং চুরির কাজে বাধা দেয়ায় রিনা খুন হয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকালে ঘাতক আজমান হোসাইন শাকিল কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর দত্তের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার বিকালে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর ২ দিন আগে ১৭ই জুন শনিবার দুপুরে ভৈরব পৌরশহরের কাঠবাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন জুয়েল মিয়ার বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে রিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত রিনা বেগম শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম টালকী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের মেয়ে। অন্যদিকে ঘাতক আজমান হোসাইন শাকিল হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কালাউক গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে।

নিহত রিনা এবং ঘাতক শাকিল উভয়েই ভৈরব বাজারের জনতা হোটেলে কাজ করতো। এর মধ্যে রিনা বেগম ধোয়ামোছার কাজ করতো আর শাকিল বাবুর্চির কাজ করতো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রিনা বেগম, তার দুই ছেলে এবং কথিত স্বামী দুলাল মিয়া ভাড়া বাসাটিতে থাকতেন। অন্যদিকে ৬ মাস আগে জনতা হোটেলে বাবুর্চির কাজ নেয় শাকিল। একই হোটেলে কাজ করার সুবাদে রিনা বেগমের সঙ্গে শাকিলের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৭ই জুন সকালে দুলাল মিয়া, রিনা বেগম ও তার দুই ছেলে কাজে বের হয়ে যাওয়ার পর শাকিল তাদের খালি বাসায় যায়। সেখানে থেকে শাকিল মুঠোফোনে রিনা বেগমকে বাসায় ডেকে আনে। এ সময় শাকিল রিনা বেগমকে জানায়, ‘কথিত স্বামী দুলালের জন্য তার বিভিন্ন অসুবিধা হচ্ছে।’

এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে রিনা বেগম শাকিলের ওপর রাগান্বিত হয়ে ঘরে থাকা একটি ইট দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করেন। শাকিল রিনা বেগমকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি নিবৃত্ত হন না। একপর্যায়ে শাকিল পেছন দিক থেকে হাত দিয়ে রিনা বেগমের গলা চেপে ধরে। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে রিনা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর বিষয়টিকে চুরি করতে গিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে এমন সাজাতে শাকিল নিহতের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি এলইডি টিভি মনিটর নিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে দুপুরে দুলাল মিয়া বাসায় গিয়ে গলায় ওড়না পেঁচানো রিনা বেগমের লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সময় দুলাল মিয়াকে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে শাকিলের বিষয়টি জানা যায়। এ ঘটনায় নিহত রিনা বেগমের মা রূপবানু খাতুন বাদী হয়ে দুলাল মিয়া ও শাকিলকে আসামি করে ভৈরব থানায় মামলা করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা রুজুর ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনসহ হত্যার সঙ্গে জড়িত আজমান হোসাইন শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরো পড়ুন : আগে বিক্রি করেছিল গ্যাস, এবার কি দেশ বিক্রি করে হলেও ক্ষমতায় আসতে চায় বিএনপি ?

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *