গোপনীয়তা বিরোধী ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। আজ শুক্রবার এ কথা জানিয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে ১৪ দিন সময় পাবেন অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে আপিল করবে বলে জানিয়েছে।
সিদ্ধান্ত দিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি ‘তাঁর মানবাধিকারের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হবে না’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে ‘তাঁর সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হবে’।
প্রত্যর্পণ ঠেকাতে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা আদালতে গিয়েছিলেন। শেষমেশ সব বিতর্ক উপেক্ষা করে এবং দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ব্রিটিশ সরকার অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবিসির স্বরাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক প্রতিবেদক তাঁর বিশ্লেষণে বলেছেন, অ্যাসাঞ্জের আইনি লড়াইয়ে এটাই এ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
গুপ্তচরবৃত্তি আইন ভঙ্গসহ মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট তথ্য ফাঁসের অপরাধে ওয়াশিংটন অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার ঘোর বিরোধী মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রত্যর্পণ অ্যাসাঞ্জকে ‘বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং সাংবাদিকদের প্রতি একটি ভীতিকর বার্তা পাঠাবে’।
অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী কোনো ‘ভুল করেননি’ এবং ‘কোনো অপরাধও করেননি’। তিনি বলেন, ‘তিনি (অ্যাসাঞ্জ) একজন সাংবাদিক ও প্রকাশক এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য শাস্তি পাচ্ছেন। ’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ ঠেকাতে অ্যাসাঞ্জের আবেদন গত মার্চে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়। এরপর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গত এপ্রিল মাসে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দেন। শেষ পর্যায়ে মামলাটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। গতকাল প্রত্যর্পণ অনুমোদন আদেশে স্বাক্ষর করেছেন প্রীতি প্যাটেল।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে বন্দি রয়েছেন। টানা কয়েক বছর লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকার পর সেখান থেকে ২০১৯ সালে বের হতে বাধ্য হন তিনি। তখন থেকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ইকুয়েডরের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহারের পর তাঁকে দূতাবাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। গুপ্তচরবৃত্তি আইন ভাঙার অভিযোগে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ এনেছে ওয়াশিংটন। অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর আচরণের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ সম্পর্কিত উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথিগুলো মার্কিন আইন ভঙ্গের পাশাপাশি মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। অন্যদিকে উইকিলিকসের দাবি, নথিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় কাজের বিবরণ এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট। সূত্র : বিবিসি, এএফপি