জেনে নিন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭ এর নমুনা

জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ স্বাস্থ্য কথা

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু : আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, শারীরিক ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা যায়। এ ছাড়াও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গ যেমন বমি এবং ডায়রিয়াও হতে পারে।

গত মাসে চীনের বেইজিং, সাংহাই ও গোয়াংজুতে করোনায় আক্রান্তের হার একদিনে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ডিসেম্বরের প্রায় ২০ দিনে ২৪ কোটি ২৮ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশ। যে ব্যাপক করোনা সংক্রমণ, তার মূলে রয়েছে ওমিক্রনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭। এটি শুরু হয়েছে গত বছরের অক্টোবর থেকে।

ইতোমধ্যে ভারতের গুজরাট, ওড়িশা ও দিল্লিতে এবং জাপানেও ছড়িয়েছে। এটির বিশেষত্ব হচ্ছে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও এটিতে সংক্রমিত হতে পারে। একজন রোগী গড়ে ২০ জনকে আক্রান্ত করতে পারে, যার প্রতি চারজনের দেহে এটি রোগ আকারে প্রকাশিত হয়। গত অক্টোবর থেকে আমেরিকাতে ৫ শতাংশ এবং ইংল্যান্ডে ৭.২৬ শতাংশ সংক্রমণ ঘটেছে বিএফ.৭-এর মাধ্যমে। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথবা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি, লিভার, ফুসফুসের রোগ অথবা যারা স্টেরয়েড নিচ্ছেন অথবা অধিকতর বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ওমিক্রন বিএফ.৭-এ আক্রান্ত হলে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, শারীরিক ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা যায়। এ ছাড়াও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গ যেমন বমি এবং ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই এই উপসর্গগুলো দেখা দিলেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিএফ.৭-এ সংক্রমিত একজন রোগী একসঙ্গে ১৮-২০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আমাদের দেশে যদি এই ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করে, তাহলে এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের থেকে বড় আকার ধারণ করতে পারে। যদিও এই উপজাতির মারণ ক্ষমতা কম। কিন্তু জনসচেতনতা জরুরি। চীনে ও ভারতে ইতোমধ্যেই খোঁজ মিলেছে বিএফ.৭-এর। চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। সব থেকে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে গুয়াংজু প্রদেশ ও চংকিং প্রদেশ থেকে। বেইজিংয়ে দৈনিক ৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের গুজরাট, ওড়িশা ও দিল্লিতে চারজন রোগীর খোঁজ মিলেছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ করোনা টিকা নিয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়ানোর জন্য তৃতীয় ডোজের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।

গত মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন বিএফ.৭। গত বছরের শেষে অতিমারি পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। করোনাভাইরাস কখনো একেবারে নিঃশেষ হবে না। সুতরাং, এই ভাইরাস সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। আবার এলো ওমিক্রন বিএফ.৭। এটি ওমিক্রনের বিএ.৫-এর একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট। যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল, তাদের সতর্ক হওয়ার জন্য প্রতিরোধমূলক মাস্ক পরা ও ভিড় জায়গা এড়ানো, বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া ও হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম, ৩০ মিনিট ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন। প্রায় তিন বছর আগে চীনের উহান শহরে প্রথম শোনা গিয়েছিল এই অজানা জ্বরে (করোনা ভাইরাস) মৃত্যুর কথা। লকডাউন করে দেওয়া হয় সারা শহর। ক্রমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। তাই অবহেলা না করে এ বিষয়ে আবারও সচেতনতাই হোক সেরা হাতিয়ার।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ।

সুত্র- বাংলাদেশ প্রতিদিন

আরো পড়ুন : আজ জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু; রাজধানীর কিছু এলাকায় ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *