গ্রেফতারকৃত আসামিদের ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে এ নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী রেজিস্ট্রি ডাকযোগে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশের জবাব না পেলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানান আইনজীবীরা। নোটিশে বলা হয়েছে, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে।
সিটিজেন ফর ডেমোক্রেসি বনাম স্টেট অব আসাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পুলিশ বা কারা কর্তৃপক্ষ কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরাতে পারবে না। কোনো মারাত্মক এবং পলায়নের আশঙ্কা আছে এমন আসামিকে এগুলো পরানো অত্যন্ত প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না। ওয়ারেন্ট ছাড়া কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হলে এবং হাতকড়া পরানো আবশ্যক মনে হলে পুলিশ তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে আসা পর্যন্ত হাতকড়া পরাতে পারবে। পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা না থাকায় ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানোর ক্ষেত্রে এর অপব্যবহার হচ্ছে।
সম্প্রতি মায়ের জানাজায় অংশ নিতে দুই ব্যক্তিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ঐ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনজীবীরা।
নোটিশে বলা হয়েছে, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়াসংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধু পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন, তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্বপরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সেক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এই প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই। অন্যদিকে জেল কোড ও কারা আইনে ‘কারা অপরাধ’-এর বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসেবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, কারাভ্যন্তরে কয়েদিরা সংশ্লিষ্ট ‘কারা অপরাধ’ করলে তার শাস্তি হিসেবে এর ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়া যেসব কয়েদি পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদের হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবল জেল কোড ও কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবল হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, কোনোভাবেই ডান্ডাবেড়ি নয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম ও শাহীনুর রহমান এই নোটিশ পাঠান।
আরো পড়ুন : ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনিয়ম প্রতিহত করায় প্রশংসিত মাদারীপুরের ডিসি