দীর্ঘ তিন বছর পর আগের চেহারায় ফিরছে পবিত্র হজ। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এবার বাংলাদেশের কোটা অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। এর বাইরে হজ টিমের সদস্য হিসেবে সৌদি আরব যাবেন অনেকে। গত বছর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কোটার অর্ধেকসংখ্যক হজযাত্রী (৬০ হাজার) হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার পূর্ণ কোটার বাংলাদেশি হজযাত্রীরা হজ পালনের সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে তিন বছর পর এ বছর বাংলাদেশের কোটা অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পাবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরবে যাচ্ছেন। ৯ জানুয়ারি সোমবার এ চুক্তি সম্পাদন হবে।’
এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রও। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৯ জানুয়ারি হজ চুক্তি হবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কাল সন্ধ্যায় সৌদি আরব রওনা হবে। প্রতিনিধি দলের ১৫ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চলতি বছরে জুনের শেষ সপ্তাহে পবিত্র হজ।’
জানা গেছে, প্রতিনিধি দলে মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম থাকবেন। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হজ কাউন্সিলর, কনসাল জেনারেল প্রতিনিধি দলে যুক্ত হবেন। হজ চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে ফরিদুল হক খান এবং সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিয়াহ সই করবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কনফারেন্স এবং এক্সিবিশনেও অংশ নেবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জনসংখ্যা অনুযায়ী করোনাভাইরাস মহামারির স্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবার সৌদি সরকার বাংলাদেশকে আগের কোটা অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীকে হজ পালনের অনুমতি দিতে পারে। এর মধ্যে ১৫ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করতে পারবেন। সে অনুযায়ী খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ পালনের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার চাইবে বাংলাদেশ। এবার রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ও লাগেজ তল্লাশির কাজ ঢাকায় সম্পন্ন হবে। এজন্য আগে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চুক্তি হয়। সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ বাংলাদেশ সফরে এলে ১৩ নভেম্বর এ চুক্তি হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করেন। ২০২০ সালের জন্য বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে হজসংক্রান্ত যে চুক্তি হয়, সেখানে বাংলাদেশি হজযাত্রীর কোটা ১০ হাজার বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৩৭ হাজার করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিদেশিদের জন্য হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ পালন করতে পারেনি। মহামারি কমে এলে গত বছর (২০২২) বিভিন্ন দেশ থেকে কোটা অর্ধেক করে হজ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার জন হজ পালন করেন। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের হজ পালনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
আরো পড়ুন : গোমস্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাইকেল আরোহী নিহত