সরকারি চাকরি আইন কার্যকরের জন্য তিন বছর আগে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আইনের জটিলতাগুলো সংশোধন করে আজ সোমবার তা মন্ত্রিসভায় তোলা হচ্ছে।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে।
কর্মচারী অবসরে গেলে তিনি যেসব সুবিধা প্রাপ্য হবেন, তা নির্ধারিত হওয়ার কথা এ আইনের ১৭ ধারায়। কিন্তু ১৭ ধারায় রয়েছে প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিষয়। অবসর গ্রহণকারী সরকারি কর্মচারীর পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫১ ধারা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। অথচ ৫১ ধারাটি হলো অবসর সুবিধা স্থগিত, প্রত্যাহার ইত্যাদি সংক্রান্ত। এসব বিষয়ও সংশোধন করা হয়েছে।
এমন আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২২’ আজ অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডায় রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে আজ দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদ্যমান আইনে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য নয় বলা ছিল। এবার তা পরিবর্তন করে তাদেরও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ চাকরি, বেতন, বয়স, পে স্কেলসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধার বিষয়টি সবার জন্য একই রকম। এ ছাড়া ক্লারিক্যাল কিছু ভুল ছিল, সেটা সংশোধন করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মচারী আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আদালতে রিটও করা আছে। সরকারি কর্মচারীদের কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করার আগে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার যে বিধান ছিল, সেটি বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানির পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রায়টি কার্যকর হওয়া স্থগিত করা হয়েছে। এ আইনের ৪১(১) ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সময় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ফৌজদারি মামলায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণের আগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
অভিন্ন পে স্কেলের জটিলতা কাটছে : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাকরি আইন প্রণয়নের আগে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন-ভাতা সংক্রান্ত ১৯৭৫ সালের চাকরি (পুনর্গঠন ও শর্তাবলি) আইন বাতিল করা হয়। এর আলোকেই সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন পে স্কেল দেওয়া হয়। গত তিন বছর ধরে আইনটি না থাকায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অভিন্ন পে স্কেল না মানলেও আইনি কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে সরকারি চাকরি আইন কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়ার পরই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর আইনটি সংশোধনে উদ্যোগ নেয় জনপ্রশান মন্ত্রণালয়। আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রুটিপূর্ণ ধারাগুলো সংশোধন করা হয়। এতে কাটবে অভিন্ন পে স্কেলের জটিলতা।
আইনটির নাম পরিবর্তন হয় চারবার : সাংবিধানিক অঙ্গীকার ‘সিভিল সার্ভিস আইন’ কোনো সরকার বাসস্তবায়ন করেনি। ২০০৩ সালে প্রথম আইনটির খসড়া করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। তখন খসড়া আইনটির নাম ছিল ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট’। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৭ সালে প্রথম ইউএনডিপির সহায়তায় ‘সরকারি কর্মচারী অ্যাক্ট’ নামে খসড়া তৈরি করা হয়। কিন্তু ওই অ্যাক্টও আলোর মুখ দেখেনি। গেজেট জারির আগেও একবার নাম পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ সরকারি কর্মচারী আইনের পরিবর্তে এর নাম দেওয়া হয় ‘সরকারি চাকরি আইন’।
এ আইন করার জন্য নেওয়া প্রকল্পটি ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলেছে। এতে মোট খরচ হয় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। বেশির ভাগ অর্থই কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, সভা ও সেমিনারে খরচ করা হয়। কিন্তু বান্তবায়ন করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় তা আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন : একাদশ সংসদের ৬ আসন শূন্য; গেজেট প্রকাশ করল সংসদ সচিবালয়