শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে: দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর খননকাজ এক মাস বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে,নদী সংলগ্ন জমির তিন শতাধিক চাষী।নদী খনন শুরু হলে আলু ক্ষেতে বালু পড়বে। এতে ক্ষতি হবে প্রায় ৫০০ একর জমির ফসলের।এমনি দাবি তুলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন,কৃষকেরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ২৭৫ জন কৃষক স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন পত্র দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণ করে। লিখিত আবেদনে তারা পূণর্ভবা নদী খননকাজ একমাস বন্ধ রাখার জন্য বলেন।
আবেদনে তারা জানান, খননের জন্য বাঁধের কাজ শুরু করায় পুনর্ভবা নদী পাড়সংলগ্ন সদর উপজেলার উলিপুর খাড়িপাড়া, মহব্বতপুর, মুরালীপুর, ঘুঘুডাঙ্গা এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পূণর্ভবা নদী সংলগ্ন দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর,খাড়িপাড়া,মহব্বতপুর,ঘুঘুডাঙ্গা,মুরালীপুর একার বিস্তৃর্ন এলাকার জমিতে আলু লাগিয়েছেন অসংখ্য কৃষক। তারা জমিতে আলু ক্ষেত পরিচর্যায় কাজ করছেন।সেচের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে, বালু উত্তোলনের জন্য নদীতে ছয়টি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে খননযন্ত্র মেশিন দিয়ে চলছে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ। পাড় বাঁধার কাজ শেষ হলে ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হবে। এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিনিধি।
কিন্তু নদী খনন শুরু হলে এতে ৫০০’একর জমির ফসলের ক্ষতি হবে। এমবাস্থায় কমপক্ষে এক মাস নদীর খননকাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ জানালেন, আলুচাষিরা।
আলু চাষী রফিকুল,মোয়াজ্জেম,মুজাম,বরকত,রহিম,রমজান,মজিবর সহ অনেকের অভিযোগ নদীপাড়সংলগ্ন জমিতে আলু, ভুট্টাসহ শীতকালীন শাকসবজির চাষ করেন তারা। তাদের প্রধান আয়ের উৎস। খননকাজে যুক্ত ঠিকাদার কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়েই তাদের আবাদকৃত জমিতে নদীর বালু ফেলতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একজন কর্মকর্তারা জানান, সদর উপজেলা গৌরীপুর হতে বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া শালবন পর্যন্ত মোট ৭৪ কিলোমিটার পুনর্ভবা নদীর খননকাজ চলছে। খনন কাজ করা হচ্ছে, ১০-১২ ফুট গভীরতায়।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানালেন,তার আলু গাছের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ দিন। আগাম আলু চাষ করেন তিনি। তার মতো অনেকেই আগাম আলু চাষ করছেন। এ আলু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারেরা নিয়ে সরবরাহ করেন। দেশে বছরের প্রথম নতুন আলুর ৩০ ভাগ এ অঞ্চলেই চাষ হয়।আর মাত্র ৩৫-৪০ দিন পরে কৃষক আগাম আলু উত্তোলন করে ঘরে তুলতে পারবেন। কিন্তু নদী খনন শুরু হলে বালু পড়বে আলুখেতে। এতে প্রায় ৫০০ একর জমির ফসলের ক্ষতি হবে।
কৃষক মোয়াজ্জেমের মতে,সবকিছু ঠিক থাকলে বিঘা প্রতি ১৩০ থেকে ১৪০ মণ পর্যন্ত আলু পাবেন তিনি। প্রতি বিঘায় খরচ পড়বে ৮৫-৯০ হাজার টাকা। কিন্তু বিঘাপ্রতি তার দেড় লাখ টাকার আলু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাড় বাঁধাই শুরুর কারণে অন্যান্য কৃষকের মতো ক্ষতি হয়েছে মো. জয়নালের। তিনি বলেন, দুই মাস আগে সমিতি থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ তুলে এবং আরো কিছু টাকা দিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছেন তিনি। পাড় বাঁধার কারণে প্রায় পুরো ক্ষের তার নষ্ট হয়ে গেছে । কিভাবে ঋণ শোধ করার এ দু:চিন্তায় তিনি দিশেহারা।
এ এবিষয়ে দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনিচুর রহমান সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভুত নয়। তবে বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিষয়টি বিবেচনার জন্য।
এ প্রতিবেদককে দিনাজপুরে দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী সামিউল করিম জানান, খনন কাজ শুরু করা হবে বিবেচনার মধ্যদিয়ে। আপাতত যেখানে ফসল নেই, সেসব জায়গায় আমরা শুরু করবো খনন কাজ।
শাহ্ আলম শাহী
দিনাজপুর।