সিলেট অফিস: জনপ্রতিনিধি হওয়ার আশায় সিলেটে দু’কুল হারালেন বিএনপির ৩৪ নেতা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করেছিলেন কিন্তু জিততে পারেননি। এতে দু’কুলই হারালেন দলের এই বিদ্রোহী নেতারা। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় জেলা ও মহানগরের ৪৩ জন নেতাকর্মীকে বিএনপির সকল পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ৯ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ৮ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১ জন নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বিএনপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সিটি নির্বাচন বর্জন করে এবার প্রার্থী হননি।
বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃতদের মধ্যে ওয়ার্ডবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হুমায়ুন কবির সুহিন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন নাদিম, ৩৯ সম্বর ওয়ার্ডে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও সংরক্ষিত ৪ নম্বরে ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের সহ-সভাপতি রুহেনা বেগম মুক্তা।
দলীয় সিদ্ধান অমান্য করে প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হওয়ার পর নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন মেয়র প্রার্থী ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুফতি কমর উদ্দিন কামু, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিঠু, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. কামাল মিয়া, সদস্য খালেদ আকবর চৌধুরী, আমিনুর রহমান খোকন ও শাহেদ সিরাজ, ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান জুবের, ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আব্দুর রহিম মতছির, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুজিবুর রহমান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান চৌধুরী শাম্মী, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে এমসি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বদরুল আজাদ রানা, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মামুনুর রহমান মামুন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান নারী কাউন্সিলর সিলেট মহানগর মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিম আহমদ রনি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আব্বাস, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি নেতা সাহেদ খান স্বপন ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মোস্তফা কামাল, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আমিন সেলিম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু মিয়া, বিলুপ্ত বরইকান্দি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সানর মিয়া, বরইকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নুরুল ইসলাম মাসুম, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে টুলটিকর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত ও ওয়ার্ড কৃষক দলের আহবায়ক ইউনুস মিয়া, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হেদায়েত হোসেন তানবীর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলাল আহমদ, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গউছ উদ্দিন পাখি, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা বিএনপি নেতা দেলওয়ার হোসেন জয়, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আব্দুল হাছিব, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক সুমন আহমদ সিকদার। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পরাজিত বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, সিলেট ইউনিটের সদস্য অ্যাডভোকেট জহুরা জেসমিন ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুন নাহার তিন্নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বহিষ্কৃত নেতা জানান, অতীতের দলীয় কর্মকান্ডে তাদের সক্রিয়তা বিবেচনা করে যেন ক্ষমা করা হয়। দলে ফেরার সুযোগ পেলে আগের মতো আবারও তারা কাজ করতে চান।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে দলের নির্দেশ অমান্য করে যারা সরকারের পাঁতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাঁদেরকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের দুর্দিনে যেসব নেতাকর্মী নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তাদেরকে ক্ষমা করার প্রশ্নই উঠেনা।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন বলেন, আজীবনের জন্য যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদেরকে দলে ফেরানোর কোন সুযোগ নেই।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : একশ’ এগারো বছর পরেও টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আজ শিরোনাম