আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচ বার্তা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এগুলো হচ্ছে- নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি, নিয়মিত জনসংযোগ, বিরোধী দলের আন্দোলন প্রতিহতে রাজপথে অবস্থান, গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং সরকারের সাফল্য তুলে ধরা। প্রায় এক বছর আগে থেকেই আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু গত তিন মাস তাদের সেই প্রস্তুতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
বিশেষ করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জেলা সফর স্থগিত করার পরই নির্বাচন প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ে। এর আগে তিনি দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেন। এতে নেতাকর্মীরা নির্বাচন কেন্দ্রিক চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। যারা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে ইচ্ছুক তারা এলাকায় সক্রিয় হন। নিয়মিত গণসংযোগ শুরু করেন।
কিন্তু দলীয় সভাপতির জনসমাবেশ স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন প্রস্তুতিতেও প্রভাব পড়ে। গত ১২ই জুলাই রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় শান্তি সমাবেশের পর আবারো নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেমেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি কীভাবে রাজপথে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায় সে পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে আগামী ৩০শে জুলাই আবারো নির্বাচনী জনসভা শুরু করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওইদিন রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভা হবে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে রংপুর আওয়ামী লীগের নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এই তারিখ জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান, তার ছেলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রাশেক রহমান প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী সপ্তাহে শেখ হাসিনার ইতালি যাওয়ার কথা রয়েছে। দেশে ফিরে রংপুরে জনসভা করার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তিনি।
এর আগে যশোর, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা প্রতিটি বিভাগের পাশাপাশি কয়েকটি জেলায় সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। এদিকে আগামীতে বিরোধীদের রাজপথের আন্দোলন মোকাবিলার পথ খুঁজতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতকালও দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র সঙ্গে সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজপথে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলীয় নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য রাজধানীতে বিএনপি’র সমাবেশের বিপরীতে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়।
সেখানে তারা তাদের রাজনৈতিক শক্তি দেখিয়েছে। মাত্র ২ দিনের নোটিশে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত করে আওয়ামী লীগ তাদের জনসমর্থনের বিষয়টি প্রমাণ করতে পেরেছে। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক শান্তি সমাবেশে বলেন, আমরা বাইরের জেলা থেকে মানুষ আনার সময় পাইনি। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে। এটাই আসলে আওয়ামী লীগ। ওইদিন শান্তি সমাবেশে প্রায় অর্ধশত নেতা বক্তব্য রাখেন। সেখানে তারা দলীয় নেতাকর্মীদের ৫টি বার্তা পৌঁছে দেন।
প্রথম বার্তায় বলা হয়, নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। আমাদের এখন থেকেই জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি যারা এমপি পদে নির্বাচন করতে চান তাদেরকে এখন থেকেই জনসংযোগে নেমে পড়তে হবে। জনগণের ঘরে ঘরে যেতে হবে। সমাবেশ থেকে রাজপথে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে যেকোনো ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। নেতারা বলেন, এখন জুলাই মাস। শোকের মাস আগস্ট। তারপর সেপ্টেম্বর, এখন থেকে কর্মসূচি চলবে। একেক মাসে একেক রকম কর্মসূচি চলবে।
আগস্ট মাসে শোকের কর্মসূচির পাশাপাশি গণসংযোগ চলবে। সমাবেশে বার্তা দিয়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্র সমাবেশ করতে হবে। আর সময় নেই। অনেক কাজ সামনে। মহিলা আওয়ামী লীগকেও মহিলা সমাবেশ করার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না। আজ থেকে ঢাকার রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে। নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, আজকের এই শান্তি সমাবেশ প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও এই দেশের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
আরো পড়ুন : ই-অরেঞ্জের সেই সোহেল রানা এখন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে