নভেম্বরে ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৪ জন

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

♦ এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪০ হাজার রোগী ♦ এখনই সময় আগামী বছরের পরিকল্পনার

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। গত নভেম্বরে ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৪ জন। এ সময় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৭১৬ জন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানী পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগ এবং মশার গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য এখন নজরদারি দরকার। এর মাধ্যমে মূলত যা যা করণীয় তা নির্ধারণ হয়। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি থাকে। এ বছর ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। তাই আগামী বছর আরও বেশি শঙ্কা নিয়ে হাজির হতে পারে। তাই এখন থেকেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু নাগরিকদের ওপর দায় চাপালে হবে না। নাগরিকদের সহায়তার জন্য প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় জোরদার করে কাজ করতে হবে। আক্রান্ত হলেও যেন মানুষ মারা না যায়, এ জন্য কমিউনিটি পর্যায়, জেলা-উপজেলা পর্যায় এবং টারশিয়ারি হাসপাতালে ভাগ করতে হবে। যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবে তাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জানুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৬ জন, মারা গেছেন ছয়জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন, মারা গেছেন তিনজন। মার্চে আক্রান্ত ১১১ জন। এপ্রিলে আক্রান্ত ১৪৩ জন, মারা গেছেন দুজন। মে মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন, মারা গেছেন দুজন। জুনে আক্রান্ত ৫ হাজার ৯৫৬ জন, মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন, মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মারা গেছেন ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন, মারা গেছেন ৩৯৬ জন। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন, মারা গেছেন ৩৫৯ জন। নভেম্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৭১৬ জন, মারা গেছেন ২৭৪ জন।

গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬৮ জন, মারা গেছেন ছয়জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ৩৫৯ জন। এ সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৬২৮ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ হাজার ৩৫৮ জন। সম্প্রতি ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ বিষয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ডেঙ্গু আমাদের জন্য জাতীয় সমস্যা। এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নেতৃত্ব দেওয়া না হলে সব মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করাটা কঠিন হবে।’ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত আক্রান্ত হয়েছে, এবার এই নভেম্বরের মধ্যে তার তুলনায় সোয়া গুণ রোগী বেশি হয়ে গেছে। আর ২৩ বছরের চেয়ে এবার প্রায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। এবার আক্রান্ত রোগীদের ৬০ ভাগ পুরুষ। কিন্তু ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৫৮ শতাংশ নারী। এবার আক্রান্তদের ৬২ শতাংশের বেশি বয়স ৩০ বছরের নিচে। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের ৬৪ ভাগের বয়স ৩০ বছরের বেশি। ২০০০ থেকে ২০১০ সালে দেশে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দশকে তাপমাত্রা দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ডেঙ্গুর রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশার বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুন : এক দফা আন্দোলনে কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ছে বিএনপি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *