নানা বাধার মধ্যেই গণতন্ত্র মঞ্চের তৃতীয় দিনে রোডমার্চ কর্মসূচি

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেই তৃতীয় দিনের মতো রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সহ ১৪ দফা দাবিতে ঢাকা থেকে দিনাজপুর-রংপুর অভিমুখে এই রোডমার্চ করে মঞ্চটি। গতকাল সকালে বগুড়া শহরের সাতমাথায় সমাবেশ করার কথা ছিল দলটির। তবে যানজটের কারণ দেখিয়ে পুলিশ সেখানে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে শহরের শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। একই স্থানে শান্তি সমাবেশ ডাকে জেলা যুবলীগ। এতে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনার আশঙ্কায় সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় বগুড়া সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে সমাবেশ করে দলটি। এরপর বিকাল ৫টায় গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের কাঁটা মোড় এলাকায় সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। এসময় গোবিন্দগঞ্জে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানান।

নেতারা বলেন, ২০১৬ সালে আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এই জমিতে অনেক রক্তপাত হয়েছে। আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে। এটা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এই জমি আমাদের। আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই।

সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ একসময় ছিল নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মেহনতি মানুষের। এটা এখন লুটেরা বেনিয়াদের দলে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের ধারায় আওয়ামী লীগ দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটা সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে।

সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। তাদের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন জবরদস্তি করে ক্ষমতায় আছে। তারা মানুষের ভোটের অধিকারকে ভয় পান। মানুষের সাধারণ অধিকারকে ভয় পান।

তিনি বলেন, রোডমার্চ কর্মসূচির খবরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে সরকারের। আমাদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে, নেতাকর্মীদের আহত করা হয়েছে। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমাদের উপর যতই হামলা-মামলা করা হোক, এ সরকার আর টিকতে পারবে না।

সাইফুল হক বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাড়িবহর, হোটেলে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যদি সেটা না করেন তাহলে বুঝবো পুলিশ প্রশাসন পেশাদারী দায়িত্ব পালন না করে সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন হয়ে ভূমিকা পালন করছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, শেখ হাসিনা তার দলকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, নিম্নরুচি ও নিম্ন সংগঠনে পরিণত করেছে। তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে এমন করে নিয়েছে যে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সফরকারী একটা দলকে আক্রমণ করতে কোনো রকম দ্বিধা করেনি। তিনি বলেন, যারা পথচারী, সফরকারীদের আক্রমণ করে তারচেয়ে কাপুরুষ আর কেউ নাই।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সবভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের ডলার নেই। লোডশেডিংয়ের কারণে বাচ্চারা ঘুমাতে পারে না। মানুষ কাজ করতে পারে না। তাদের লজ্জা নাই। তারা ডলার চুরি করতে করতে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলকে তারা (আওয়ামী লীগ) এমনভাবে দেউলিয়া করেছেন যারা নির্বাচনের দাবি করে বাংলাদেশে তাদের নির্বাচন করতে দিতে তারা রাজি নয়। তারা যে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দল নয় এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয় তাদের কলঙ্কের কারণে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে কলঙ্কিত করেছে।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়ন মানে অল্পসংখ্যক লোক যারা ক্ষমতার নাটবল্টুতে থাকে তাদের উন্নয়ন। আমাদের দেশের কৃষক শ্রেণির কোনো উন্নয়ন এই শেখ হাসিনার আমলে হয়নি। কতিপয়ের পকেটে টাকা ঢুকছে। আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, নিম্নবিত্ত মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী তারাই ৯০ ভাগ মানুষ। তাদের জীবনে উন্নতি নাই। উন্নতি হচ্ছে শেখ হাসিনা, তার আত্মীয়, ভাই- তাদের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের। এটাই বাংলাদেশে হয়ে আসছে।

রোডমার্চ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে ‘হামলা ও বাধার’ অভিযোগ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, মঙ্গলবার আমরা বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে মিটিং করতে চেয়েছিলাম, যুবলীগ সেখানে পাল্টা শান্তি সমাবেশ ডেকে প্রশাসনকে বিব্রত করেছে। পুলিশ আমাদের সভার অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে। আগেরদিন মোকামতলায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মিটিং করেছি। সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। রাতে বগুড়া শহরে আবাসিক হোটেলে হামলা হলো কিন্তু পুলিশ কিছুই করলো না। সমাবেশ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা প্রশ্ন করে বলেন, দেশটা কী আওয়ামী লীগ লিজ নিয়েছে? নাকি ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে সরকার। তাই মিটিং-মিছিল শুনলেই আতঙ্ক বোধ করছে।

বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলার সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, জেএসডি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

আরো পড়ুন : অসহনীয় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপি’র হারিকেন মিছিল

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *