কাওছার আহমদ, সিলেট: সিলেটের নাম শুনলেই জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা, সবুজ পাহাড়, উচুঁ-নিচু টিলাবেষ্টিত চা-বাগান, সাদা পাথর ও পিয়াইনের স্বচ্ছ পানি চোখে ভেসে ওঠে পর্যটকদের। এছাড়া রাতারগুলের প্রকৃতি, আর নীল পানির নদ লালাখাল তো রয়েছেই। জাফলং, পান্তুমাই, চা-বাগান,সাদা পাথর, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লোভাছড়া, বিভিন্ন পাহাড় ও ঝরনা স্পটে বছরের সব সময়ই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে বিশেষ দিবসে পর্যটকদের ঢল নামে। এবার ঈদুল আযহার আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে এসছেন। টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিনোদনের জন্য বিভিন্ন স্পটে ছুটাছুটি করছেন।
শুকনো মৌসুমের চেয়ে বর্ষায় পযটনকেন্দ্রগুলো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তখন স্বরুপে ফিরে আসে। আর মেলে ধরে নিজেদের সৌন্দর্য্য। পর্যটন স্পটগুলোর পাশাপাশি শাহজালাল (রহ.), শাহপরান (রহ.) ও বুরহান উদ্দিন (রহ.) মাজারও একনজর দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় করছেন।
করোনা পরিস্থিতির নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই বছর পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলনা পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। তবে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ভারী বর্ষণেও ঈদের ছুটিতে একটু বিনোদনের আশায় পর্যটকরা সিলেটে এসছেন। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘুরতে আসা পর্যটকেরা যাতে হয়রানি বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হন, এ জন্য নেওয়া হয়েছে নজরদারির ব্যবস্থা। এজন্য জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এদিকে পর্যটকদের আগমণে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন। জাফলংয়ের মামার দোকানের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী ফখরুল আলম বলেন, সারা বছরই পর্যটকদের আগমণে ব্যবসা ভালো হয়। ঈদ বা বিশেষ কোন দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের আগমণ আরও বেড়ে যায়, তখন আমাদের ব্যবসাও জমজমাট হয়। এবার বৃষ্টির মধ্যেও আশানুরুপ ব্যবসা হচ্ছে।
সিলেট বন্দর বাজার সিটি হার্ট আবাসিক হোটেলের মালিক নিজাম উদ্দিন জানান, অনেকে ঈদের আগে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন। এখন মাত্র দুইটি রুম খালি আছে, এগুলো বুকিং হলে আর নেওয়া যাবেনা। আরও ১-২ দিন পর্যন্ত গেস্টরা থাকবেন। একই অবস্থা নগরীর অন্যান্য আবাসিক হোটেলগুলোতেও। লালবাজার পয়েন্টে অবস্থিত এশিয়া হোটেলের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। সোমবার পর্যন্ত রুম খালি হবেনা।
সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী বলেন, এবারের ঈদে পর্যটকদের চাপ বেশি। সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়াতে পর্যটকেরা আগেভাগেই বিভিন্ন হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং করে রেখেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং জানান, মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যেও প্রচুর পর্যটক সাদাপাথর এসেছেন। শনিবার অফ ডে থাকায় পর্যটক বেশি ছিল। আগত পর্যটকদের হয়রানি না করতে নৌকা ভাড়া নির্ধারণ ও হোটেল-রেস্তোঁরা ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পাথরের বিপজ্জনক স্থানগুলোতে যাতে পর্যটকেরা না নামেন, সে জন্য লাল নিশানা টাঙিয়ে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ ও প্রশাসনের আলাদা দল গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে পর্যটকরা আনন্দ আরও বেশি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাত হয়ে অনেকে ছুটাছুটি করছেন। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও পর্যটকদের উপস্থিতি যথেষ্ট রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জাফলং সাব জোন টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রতন শেখ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। আগত পর্যটকদের হয়রানি কমাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও কাজ করবে। যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই, সেখানে জেলা পুলিশ পর্যটকের পাশে থাকবে। ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, জাফলংয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাতেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় পর্যটকেরা ভুল করে যাতে ভারত সীমান্তের দিকে পা না বাড়ান, সে জন্য বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদেও আগে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের সমন্বয়ে টহল দল বৃদ্ধিসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও (ইউএনও) সমন্বয় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কাওছার আহমদ