নিজস্ব প্রতিবেদক: এখন আর কোনো নির্বাচন নয়, আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমাদের সব সংকটের মূলে এই আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ জোর করে বিনা ভোটে নির্বাচিত না হয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
এখন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব যে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণকে রাজপথে নিয়ে এই ভয়াবহ বাংলাদেশকে ধ্বংসকারী এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে একটা সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি, সবার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে তাদেরকে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটি জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠন করতে হবে।
শিক্ষকদের জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠিত হতে হবে। সমস্ত বুদ্ধিজীবী মানুষদের, সকল সচেতন মানুষকে আপনারা জাগ্রত করবেন এবং তরুণ, যুবক শ্রেণিকে জাগ্রত করবেন, যারা এই লড়াইয়ে অংশ নেবে এবং জয়ী হবে।
তিনি বলেন, আপনাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে এই সরকার, একেবারেই ধ্বংস। উচ্চশিক্ষাকে আরো ধ্বংস করে ফেলেছে। এমন এমন ভাইস চ্যান্সেলর নিয়ে আসেন যে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাহেবের মতো, উনিও একই ঘরানার লোক। সেদিন এক টক শোতে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যিনি, তিনি কথাও বলতে পারেন না। এটা তার (সৈয়দ আনোয়ার হোসেন) কথা। এই সমস্ত মানুষকে দিয়ে, দলবাজ, চাটুকার লোকজনকে দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে আবার আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে, একটা মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব অত্যন্ত যথার্থ একটা স্লোগান দিয়েছেন- ‘ট্যাক ব্যাক বাংলাদেশ’। বাংলাদেশকে আবার আগের জায়গায় ফেরত আনো, গণতন্ত্রের জায়গায় নিয়ে আসো, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জায়গায় নিয়ে আসো, যেখানে মুক্ত সমাজ থাকে, সবাই যেন কথা বলতে পারে, তার মতামত প্রকাশ করতে পারে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একদিকে সাধারণ মানুষ, তাদের প্রতিদিনকার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এই সরকারের বিভিন্ন রকমের নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তের কারণে এবং তাদের পেটে যখন আঘাত করতে শুরু করেছে, অর্থাৎ চাল-ডাল-তেল-সবজির দাম এমন পর্যায়ে গেছে, যে পর্যায়ে সাধারণ মানুষের জন্য, যাদের আয় অত্যন্ত সীমিত তাদের পক্ষে জীবনধারণই অত্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থার মধ্যে আছে যারা নিম্নবিত্তের মানুষ, যারা নামতে পারে না, প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের অভাবের কথা মানুষকে জানাতেও পারে না তারা।
‘অন্যদিকে আজকে কারা ভালো আছে? একটা লুটেরা এলিট শ্রেণি ভালো আছে। এই লুটেরা এলিট শ্রেণি কারা? এই শ্রেণি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা, তাদের মন্ত্রী, তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আমলা কিছু আছেন, যারা প্রতিদিন দেখবেন বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করছেন, কিভাবে তাদের আরো বিত্ত-সম্পদ তৈরি হবে, কানাডায় বেগমপাড়ায় তাদের বাড়ি তৈরি হবে। আর আছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী শিক্ষক, কিছু বুদ্ধিজীবী- এরা এবং তারা যখন টক শোতে কথা বলেন তখন মনে হয় মোমেন সাহেব (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, বেহেশতে আছি- এটা অমূলক কোনো কথা নয়। তারা প্রমাণ করতে চান আসলেও মানুষ বেহেশতে আছে।
তিনি বলেন, এককথায় বলা যায় এই সরকার একটা লুটেরা সরকার, এই সরকারের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এই সরকার রাষ্ট্রকে ইতিমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। প্রমাণ তারা একে একে দিয়েছে।
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক আবুল হাশেম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদুল হাসান মুক্তা, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শের মাহমুদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক সৈকত, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর সরকার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন উর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পারভেজ রেজা কাকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাহবুব আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন : ইসলামের জন্য কোনো সরকার আ. লীগের মতো এত কাজ করেনি