গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে সরকার। দরকার হলে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণ করা যাবে। এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে সরকারের জ্বালানি বিভাগ থেকে পাঠানো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি (সংশোধন) আইন, ২০২২ উত্থাপন করা হলে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াতে বা সমন্বয় করতে পারবে। তবে আগের মতো শুনানিসহ মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতেও রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিদ্যমান আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বিইআরসি ৯০ দিন সময় নিয়ে নির্ধারণ করে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারও যেন তা নির্ধারণ করতে পারে এজন্যই প্রস্তাবিত এ সংশোধনী মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল, এলপিজি ও এলএনজি আমদানি করা যাবে। আমদানি করা জ্বালানি তারা যেন বিক্রিও করতে পারে—এ নিয়ে বৈঠকে আলাদাভাবে আলোচনা হয়েছে। আমদানিকারকরা এসব জ্বালানি চাইলে বিপিসিতে বিক্রিও করতে পারবে। তবে মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, এটা করা গেলে সরকারের ওপর চাপ কমবে। এতে দামে প্রভাব পড়বে না। সরকার মনিটরিং করবে। তখন দামও কম পড়বে।
এদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি (সংশোধন) আইন, ২০২২ অনুমোদিত হওয়ার পর বিইআরসির কর্তৃত্ব কমল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে মন্ত্রিসভায় পাঠানো জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। সংসদ অধিবেশন না চলায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ দিয়ে সংশোধনটি জারি করা যেতে পারে।
বিইআরসি আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমান আইনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ/মূল্য সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারেরও ক্ষমতা সংরক্ষণ-সংক্রান্ত বিধান সংযোজনের উদ্দেশ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে (সংলাপ-চ) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারেন।
বিইআরসির বিদ্যমান আইনের মূল্যসংক্রান্ত অধ্যায়ের ধারা ৩৪ মোতাবেক সরকারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রণীত নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ, ভোক্তাপর্যায়ে মূল্য বিইআরসি নির্ধারণ করে থাকে। এ আইনে আরো উল্লেখ রয়েছে, কমিশন লাইসেন্সি এবং অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর শুনানির পর মূল্য নির্ধারণ করবে।
আইন সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের মূল্য সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতির গতি চলমান রাখার সঙ্গে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে মূল্য সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারেরও ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩-এর ধারা ৩৪-এর উপধারা ৩ সংশোধন এবং ধারা ১ সন্নিবেশিত করার প্রস্তাব করা হলো।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ (খুচরা) মূল্যহার সংক্রান্ত প্রবিধানমালা জারি হলেও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্যহারসংক্রান্ত কোনো প্রবিধানমালা জারি হয়নি। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বিইআরসি নির্ধারণ করলেও জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে আসছিল।