আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী) আসন। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে গোপালগঞ্জ-১ লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের আসন বলেই পরিচিত হয়ে আসছে। অবশ্য কোনো নেতার ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব বা জনপ্রিয়তার কারণে নয়, নেহাত আঞ্চলিকতার মাপকাঠিতে এটি আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত আসন বলে বিবেচিত। ১৯৫১ সালে মুকসুদপুরের বেজড়া গ্রামে জন্ম নেয়া ও ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মুহাম্মদ ফারুক খান ১৯৯৫ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পরপরই আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরূপে বিজয়ী হন। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক হওয়া ফারুক খান ধাপে ধাপে সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ থেকে সরকারের মন্ত্রীও হন। বর্তমানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসীন থাকা এই সাবেক মন্ত্রী যথারীতি নৌকার প্রার্থী হলেও তাঁর গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুকসুদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া। এই কাবির মিয়ার প্রার্থিতা বাতিলের খবরে কর্নেল ফারুক খানের সমর্থককুলের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছিল। কিন্তু গত ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নৌকার অনুসারীদের মাঝে আবারও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাবির মিয়া। তিনি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়া ৭ জানুযারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এতটাই আলোড়ন তুলেছেন যে, আওয়ামী লীগের পাঁচবারের সংসদ সদস্য কর্নেল ফারুক খানের ভাগ্য নিয়ে রীতিমতো সমর্থকরাই সংশয়ে। সংশয়ের মাত্রাটা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, ফারুক খানের মেয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউব লাইভে এসে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোটপ্রার্থনা করছেন। বাবার পক্ষে মেয়ের এবারই প্রথম ভোট চাওয়ার বিষয়টিও দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ফারুক খান নৌকার প্রতীক নিয়ে লড়লেও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তরুণ ভোটারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় কাবির মিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়াটা ছিল রীতিমতো বিস্ময়ের। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়াকে নিয়ে আলোচনাটাও তাই তুঙ্গে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শুধু কাবির মিয়া নন, নির্বাচনের দিন যত এগোচ্ছে, ততই বিভিন্ন আসনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আরো পড়ুন : সিলেটে নৌকার কান্ডারিদের ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র নেতারা
আরো পড়ুন : স্বতন্ত্র বাধায় জয়ের অনিশ্চয়তায় জোটের শরিকরা
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকেই ঘোষণা হলো, এবার কেউ বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন না। ভোটার উপস্থিতিও বাড়াতে হবে। কোনো আসনে বিরোধী প্রার্থী না থাকলে প্রয়োজনে ‘ডামি প্রার্থী’ দাঁড় করানো এবং ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ রাখার ঘোষণাও দেওয়া হয়। হাইকমান্ডের ঘোষণার সুযোগে বেশির ভাগ আসনেই নৌকা মার্কার বিপরীতে লড়ছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা ও সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রীরা যেমন আছেন তেমন স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালীরাও রয়েছেন। স্থানীয় নেতারা অনেকে নৌকার প্রার্থীদের ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
এখনো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারা কি ‘ফ্রি স্টাইলে’ নির্বাচন করতে পারবেন, নাকি দলীয়ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তাদের ‘ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি’ বা নির্বাচনি কৌশল। এটা তো ওপেনলি আমাদের সভানেত্রী বলে দিয়েছেন। একাধিকবার তিনি বলেছেন ‘ওই সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন নতুন করে হয়নি’।
বিএনপি ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার সারা দেশে ‘নৌকা মার্কা’র সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মুখ্য হবে এমন ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা-১৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। নৌকা নিয়ে লড়ছেন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জানান দিচ্ছেন এ আসনেরই সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ। নবম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী মুরাদ জং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার জংয়ের ছেলে। ফলে এখানে নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
নৌকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনটিও। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এনা। এনামুলের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বরিশাল-৫ সদর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত অটুট না থাকলে এ আসনের নৌকার প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলোচিত-সমালোচিত সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তুমুল আলোচনায় রয়েছেন। তার বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী ডা. শাম্মী আখতার প্রার্থিতা ফিরে পেলে তাঁকে লড়াই করতে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে এ আসনে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। বরিশাল-২ আসনে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুছ। এ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন- এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের কাছে ঢাকা-৮ আসন হাতছাড়া হওয়ার পর রাশেদ খান মেনন এমপি বরিশাল-২ এবং বরিশাল-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বরিশাল-৩ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। কোনোমতেই এ আসনটি ছাড়তে চাইছে না জাতীয় পার্টি। এ কারণে বরিশাল-২ আসনটিতে নৌকা প্রতীকেই লড়তে চান রাশেদ খান মেনন। বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহে আলম। তাঁর স্থলে মনোনয়ন দেওয়া হয় তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুছকে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির। তিনি নবম সংসদে আওয়ামী লীগের এবং তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীক পেলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মনিরুল ইসলাম মনিরের সঙ্গে। আর তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুছের হাতে নৌকা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনিরের সঙ্গে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনটিতে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এ আসনে নৌকা চেয়েছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন তিনি। হাসানুল হক ইনু নৌকা পেলেও কামরুল ইসলামের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। পিরোজপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল আউয়াল। এ আসনে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
গত নির্বাচনে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক ভূঁইয়া চাঁদপুর-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও তা হাতছাড়া হয় ঋণ খেলাপের দায়ে। নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বাতিল করলে নৌকা পেয়ে যান সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান। নবম সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান গত নির্বাচনে বিজয়ী হন। এ আসনেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শামসুল হক ভূঁইয়ার প্রতি ঝুঁকছেন দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বড় অংশটি। নরসিংদী-৩ আসনের নির্বাচনও জমে উঠেছে। হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে আবির্ভূত হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম। এ আসনে নৌকার প্রার্থী জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। নরসিংদী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। মনোহদীর পাঁচবারের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। তিনি শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) নূর উদ্দিন খানের ভ্রাতুষ্পুত্র। এ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমানসহ চারবারের সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এ ক্ষেত্রে জয়-পরাজয় দুটোই থাকছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সামনে। মাদারীপুর-৩ আসনে আবদুস সোবহান গোলাপের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম। পঞ্চগড়-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নাঈমুজ্জামান ভূইয়ার নাম ঘোষণা করার পর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন নেতা-কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য মাজহারুল হক প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, আটোয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু সংবাদ সম্মেলনে মনোনয়ন বদলের দাবি জানান। ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরুল্লাহ। বর্তমান সংসদ সদস্য যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। নিক্সন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ভাগনে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে। গাইবান্ধা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বদল করে দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে। বর্তমান সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
টাঙ্গাইল-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. কামরুল হাসান খান। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম টাঙ্গাইল-৩ আসনে প্রার্থী তাঁর দল কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীকে। টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাহেরুল ইসলাম তালুকদার। এ আসনে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী। টাঙ্গাইল-৪ ও টাঙ্গাইল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। টাঙ্গাইল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মামুনুর রশীদ।
যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকা পেয়েছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বাবু। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ফিরোজ আহমেদ স্বপন। স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশ কয়েকবারের সংসদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান। এ আসনে সরদার মুজিবও স্বতন্ত্র প্রার্থী।
জামালপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান হেলাল। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও অব্যাহতি পাওয়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। কুমিল্লা-৪ আসনে বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল মুন্সি এবারও নৌকার মাঝি হয়েছেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। যদিও আবুল কালাম আজাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছেন। ফিরে পেলে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর পাল্লাই ভারী। রাজশাহী-১ আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। এ আসনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। গতকাল মাহি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমসহ মোট ১০ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগ নেতা। সিংগাইর ও হরিরামপুর উপজেলা নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসনটিতে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ও সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান। গাইবান্ধা-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এবারও নৌকা পেয়েছেন। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার মরহুম ফজলে রাব্বির মেয়ে ফারজানা বুবলী। এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এ ছাড়া আরও কিছু আসনে নৌকা প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
আরো পড়ুন : হলফনামার তথ্যমতে মন্ত্রী-এমপির গৃহিণী স্ত্রীদেরও আয় ও সম্পদ বেড়েছে বহুগুন