পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে

প্রচ্ছদ রাজনীতি শিক্ষা শিশু ধর্ষণ শিশু নির্যাতন শিশু/কিশোর হ্যালোআড্ডা

গৌরনদী, বরিশাল প্রতিনিধি: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড যুবলীগের এক নেতার (৩২) বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে গতকাল বুধবার রাতে সালিস করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মো. বাদল হোসেনসহ দলটির নেতা-কর্মীরা।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, সালিসেের নামে প্রহসন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতা বাদল হোসেন জোর করে সালিস বৈঠক করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এলাকাবাসী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠা ওই যুবলীগ নেতা পেশায় একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। গৌরনদী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানির পাম্প নষ্ট হলে ওই যুবলীগ নেতা কাজটি নেন। ১৯ জুন পাম্প মেরামতের জন্য ওই বিদ্যালয়ে যান। ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ের ছাদে কাজ করার সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী কান্নাকাটি শুরু করলে তিনি তাকে মারধর করেন। ছাত্রীর কান্নাকাটি শুনে সহপাঠী ও শিক্ষকেরা সেখানে গেলে ওই নেতা চলে যান।

ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের স্যানিটারি কাজে ওই যুবলীগ নেতাকে ডাকা হয়েছিল। কাজের শেষ দিকে দুপুরে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। ওই ছাত্রীর চিৎকারে তাঁরা গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে সান্ত্বনা দেন।

এ ঘটনার পর গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. বাদল হোসেনসহ দলটির নেতা-কর্মীরা ওই পরিবারকে জোর করে সালিস বৈঠক করতে বাধ্য করেন। বৈঠকে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতাকে এক শ জুতার বাড়ি ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে ওই যুবলীগ নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সালিসে জুতাপেটার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাই ঘটেছে সব সমাধান হয়ে গেছে। এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ছাত্রীর একাধিক স্বজন অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা বাদল হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। পরে গতকাল রাতে তাঁদের সালিসে বসতে বাধ্য করেছেন এবং বিচারের নামে প্রহসন করেছেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘মোরা গরিব অসহায়। মোগো বিচার চাওয়ার জায়গা নাই। যা হওয়ার হেইয়া অইছে, এইয়া লইয়া কোনো কথা কমু না।’

তবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সালিসে বসতে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. বাদল হোসেন। তিনি বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতে সালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে তিনি, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার চাচা, স্থানীয় সমাজসেবক মো. টিটু সরদারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সালিসের সর্বসম্মতিতে অভিযুক্তকে তাঁর চাচা এক শ জুতাপেটা করেছেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা মীমাংসা করা অপরাধ, কেন আইনের কাছে সোপর্দ করলেন না—জানতে চাইলে বাদল হোসেন বলেন, ‘এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় পাঠাইনি।’

গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে বিদ্যালয় থেকে জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন : মার্ক জাকারবার্গকে খাঁচাবদ্ধ রিংয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন ইলন মাস্ক

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *