পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শুভ’র সংসার চলে জুতা সেলাই করে

ওকে নিউজ স্পেশাল জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল শিক্ষা শিশু অধিকার শিশু শ্রম শিশু/কিশোর হ্যালোআড্ডা

ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: ‘বাবা শ্রী ফড়িং রবি দাশ। মারা গেছে এক বছর আগে। জুতা সেলাই করে সংসার চালাতেন বাবা। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা ও ছোট ভাই নিয়ে ৩ জনের সংসার চালাতে হয় আমাকে। আমি এখন জুতা সেলাই করে সংসার চালেই। দিনে এক’শ টাকা করে ইনকাম করি। সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হয়।’ কাজ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন, ৫ম শ্রেণির পড়ুয়া ছোট্ট শিশু শুভ (১১)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের কাশিয়াবোনা গ্রামে।

উপজেলার ময়ামারী মোড়ে কথা হয় শুভর সাথে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাড়ার আর দশটা শিশু বসে পড়ার টেবিলে। হৈ-হুল্লোড় করে মেতে উঠে খেলায়। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ায় ছোট্র শিশু শুভ সংসার চালানোর দায় নিয়ে ছুটে চলে কাজের সন্ধানে। বাবার রেখে যাওয়া পেশায় জুতা স্যান্ডেল মেরামত ও কালি করে আয় করে শুভ। কাজের ফাঁকে আলাপচারিতায় উঠে আসে সংসারের টানাপোড়েন, আর্থিক সমস্যা, বেঁচে থাকার জীবনসংগ্রামের নানা কথা।

শুভ বলেন, ‘বাবাও মুচির কাজ করতেন। আমি যখন ক্লাশ ফোরে পড়ি তখন আমার বাবা বরেন্দ্র অঞ্চলের দিকে যায় ধান কাটার জন্য। একদিন ধানের জমিতে শিয়ালকে তাড়া দিতে গেলে কামড় দেয় বাবাকে। শিয়ালের কামড়ে মারা যায় বাবা। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি কাজ করে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে সংসার চালাই। কোনো দিন এক’শ টাকা, কোনো দিন তারো কম আয় হয়।’

পড়ালেখার কথা জানতে চাইলে শুভ বলেন, ‘সংসার চালানোর মত কেউ না থাকায় সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে আসি কাজে। স্কুলের সময় হলে চলে যাই স্কুলে। ছুটি হলে আবার কাজ করি।’ কাজের চাপে পড়াশোনা করতে পারবেনা এমন ভাবনায় কেঁদে ফেলে শুভ। সে পড়া শুনা করতে চায়। অন্যদের মত মানুষ হতে চায়।

পাশের দোকানদার মোঃ ফজলুল হক জানান, ‘ছোট ছেলে খেলার বয়স। পাশে যখন ছোট ছেলেরা খেলাধুলা করে তখন কাজ ছেড়ে দিয়ে শুভ তাদের সাথে খেলা শুরু করে। স্কুলের সময় স্কুলে যায়, স্কুল থেকে এসে এখানে কাজ করে।’

মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেটার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার নিজের একটি ঢোক দিয়ে আমার জায়গায় বিনা ভাড়ায় রেখেছি। যতদিন মন চায় ততদিন কাজ করবে।’

দলদলী ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাও. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ভাবে কোনো সহযোগীতা পেলে সংসার চালানো সুবিধা হতো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সহযোগীতা করলে সংসারের পাশাপাশি পড়ালেখা করতে পারতো ছেলেটা।’

গোলাম কবির-ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আরো পড়ুন : গোবিন্দগঞ্জের যত খবর

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *