মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: ছুটিছাটা বলে কিছু নেই। ছুটির দিনে হয় তো ভিড়টা একটু বেশি হয়। কিন্তু প্রতি দিনই কমবেশি পর্যটকের পা পড়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাহাড়ি অঞ্চলের মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে, জলপ্রপাতের কাছে। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান এটি।
কিন্তু মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কাছে টিলা ধসসহ বিভিন্ন কারণে বসার বেঞ্চ নষ্ট হয়েছে। পায়ে চলার পথের টাইলস নষ্ট হয়েছে। শৌচাগারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ভালো অবস্থায় নেই। অথচ ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল (করোনাকালের ২ বছর ব্যাতিত) পর্যন্ত মাধবকুণ্ড-ইকোপার্ক থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করলেও মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে, জলপ্রপাতের উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রায় এক দশকের মধ্যে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। এতে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক অনেক পর্যটকের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে।
বড়লেখার স্থানীয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন পাপলু বলেন, ‘মাধবকুণ্ডের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে পরিচ্ছন্নতার অভাব। ব্যবস্থাপনাটা খুবই দুর্বল। জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের বসার ও বিশ্রামের ভালো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূরদূরান্ত থেকে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ আসেন। শতশত পর্যটকদের জন্য একটি মাত্র শৌচাগার। এটা খুবই দুঃখজনক। আগত পর্যটকরা এ জন্য অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। প্রকৃতিকে রক্ষা করে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে সাজানো যেত। এখানে সুন্দর চেয়ার, বিশ্রামের জন্য শেড করা যেত।’ মাধবকুণ্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ এখানে তেমন দৃষ্টি দিচ্ছে না। কোনো উন্নয়ন নেই। পর্যটক অনেক কমে গেছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক। স্থানীয় ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুরসংখ্যক পর্যটক একটু নির্জনতা এবং এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনায় রেখে কিছু উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, যা চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ছিল না। তার পরও টিলা ধসসহ বিভিন্ন কারণে অনেক কিছুই ভেঙেচুরে গেছে। প্রায় ১০ বছরের মধ্যে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে আর উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। সর্বশেষ ২০১১ সালে মাধবকণ্ডু ইকোপার্কের জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের বসার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পাইপের ছয়টি বেঞ্চ ও তিনটি শেড তৈরি করা হয়েছিল। এখন আছে তিনটি বেঞ্চ। যেগুলো আছে, সেগুলোরও পাইপ নেই। ২০১২ সালে কিছু পাইপ চুরি হয়ে যায়। এসব বেঞ্চে পাইপের বদলে বাঁশ রাখা আছে, যাতে পর্যটকরা বসতে পারেন না। ২০১৬ সালে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতঘেঁষা একটি টিলা থেকে পাথরখণ্ড ও গাছপালা ধসে পড়ে। এসময় বসার স্থান ও শেড নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘদিন গেলেও এগুলো আর মেরামত করা হয়নি। এরপরও একাধিক বার টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। জলপ্রপাত এলাকায় পায়ে চলার পথে টাইলসের ওপর শ্যাওলা জমেছে। কোনো কোনো জায়গায় টাইলস ভেঙে গেছে। বর্ষায় এই টাইসলগুলো মারাত্মক পিচ্ছিল হয়ে যায়। পর্যটকরা পা পিছলে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। ২০১৭ সালে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরের রাস্তা হঠাৎ করে দেবে যায়। পরে ঐ জায়গাটুকু সংস্কার করে চলচালের উপযোগী করা হয়েছে। ২০১৩ সালে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে শিশু ও পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য দুটি কটেজ (বিনোদনের স্থান) করা হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। বাড়তি আকর্ষণ তৈরিতে স্থানীয়ভাবে এই কাজটুকুই হয়েছে।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ‘পর্যটকদের চাহিদার দিকটি বিবেচনায় রেখে বসার বেঞ্চ, শৌচাগার, গাইড ওয়াল তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়কের টাইলস বিভিন্ন স্থানে ভেঙেছে। এগুলোও সংস্কার করা হবে। চলতি বছরেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
আরো পড়ুন : নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে চায় অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী