সিলেট অফিস: এবার শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ‘প্রতীকী ক্লাস’ নিলেন সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির চাকুরিচ্যুত শিক্ষক স্থপতি রাজন দাশ। গতকাল বুধবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে বিকেল ৪ টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ক্লাস নেন। এতে ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস পরিচালনা করেন। এসময় প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষের ৬০জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। বৈধ উপাচার্যের মাধ্যমে বরখাস্তের চিঠি বাতিলের পরও তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তিনি এই প্রতীকী ক্লাস নিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান।
রাজন দাশ জানান, চাকুরিচ্যুতির বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইউনিভার্সিটির বৈধ উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ই-মেইলে বরখাস্ত বাতিল করেন। এরপরও আমি ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারছিনা। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে অবৈধ উপাচার্যের নির্দেশে তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গরা শারীরিকভাবে বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা স্বত:স্ফুর্তভাবে আমাকে সমর্থন করে যাচ্ছে। যেহেতু ১৫ বছর ধরে তাদের ক্লাস নিচ্ছি, তাই তাদের অনুরোধ রাখতে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিলাম।
শিক্ষার্থীরা জানান, স্থাপত্য বিভাগের প্রতিভাবান শিক্ষক হলেন রাজন দাশ ও সৈয়দা জেরিনা হোসেন। গুণী এই দুই শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এদেরকে পুনর্বহাল করা হোক। সজিব হোসেন ও নুসরাত জাহান নামে দুই শিক্ষার্থী বলেন, নিশ্চয় শিক্ষকদের অনেকটা গুণাবলী রয়েছে, যার কারণে শিক্ষকের পক্ষে আন্দোলন হচ্ছে । আমরা স্যার ও মেডামকে ক্লাসে চাই।
বিশ্ব বিদ্যালয় সূত্র জানায়, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে গত ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক। ট্রেজারার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েই ১২ অক্টোবর স্থাপত্য বিভাগের দুই শিক্ষক রাজন দাশ ও সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করেন। রাজন দাশের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও সৈয়দা জেরিনা হোসেনের বিরুদ্ধে বার্ধক্যতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, এই আদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী হয়নি বলে দাবি করেন স্থপতি রাজন দাশ। তিনি জানান, কারণ দর্শানোর নোটিশ তিনি ১১ অক্টোবর পেয়েছেন। নোটিশে উল্লেখ ছিল ৩ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। নোটিশ গ্রহণ করেই তিনি ওইদিন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নোটিশের জবাবের জন্য ১০ দিন সময় চেয়েছেন। কিন্তু তাকে পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ দেওয়া হয়নি। নোটিশ গ্রহণের একদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করছেন সৈয়দা জেরিনা হোসেন। মেধাবী এই শিক্ষককেও বয়সের দোহাই দিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে, এই দুই শিক্ষকের চাকুরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ও রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন সিলেটের সম্মিলিত নাগরিক সমাজও। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সম্মিলিত নাগিরিক সমাজের নেতারা অবিলম্বে ইউনিভার্সিটির এই দুই শিক্ষকের পূনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বনমালি ভৌমিক এর ব্যক্তিগত মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এতে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কাওছার আহমদ
আরো পড়ুন : তুমিও নেই সুখে —রাহুল রাজ