প্রতি বছরের মতো এবারও ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়েছে। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন প্রবর্তিত ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার এ বছর পেলেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় আবদুলাহ জেয়াদ। আজ ২৬ অক্টোবর ২০২২ চ্যানেল আই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়। পুরস্কার তুলে দেন নাট্যজন আতাউর রহমান, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সুজাতা ও আবদুল লতিফ বাচ্চু, রন্ধনবীদ কেকা ফেরদৌসী, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি., চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও প্রয়াত ফজলুল হকের জামাতা মুতিক মজুমদার বাবু এবং জহিরউদ্দিন মাহমুদ মামুন। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা, সম্মাননা পত্র ও ক্রেস্ট।
অতিথি ও পুরস্কারপ্রাপ্তরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, বিশিষ্ট লেখক ইফতেখারুল আলম, বাচসাস সভাপতি রাজু আলীম প্রমুখ।
প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে ২০০৪ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’ এর সম্পাদক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রেসিডেন্ট-এর নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে প্রতি বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। বুধবার (২৬ অক্টোবর) এই গুণী ব্যক্তিত্বের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়।
১৯৩০ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফজলুল হক। পঞ্চাশের দশকে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যাত্রা শুরু করেনি চলচ্চিত্র শিল্প, সে সময় বগুড়ার মতো মফস্বল শহর থেকে ‘সিনেমা’ নামে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পত্রিকাটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সিনেমা বিষয়ক সাময়িকী। সারাদেশেই এটি আলোড়ন তুলেছিল। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন এবং জনপ্রিয় পত্রিকা ‘সিনেমা’। এ সূত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ফজলুল হক। তিনি ষাটের দশকে ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে দেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্রটিও নির্মাণ করেন। শুধু তা-ই নয়, ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য টিভি ব্যক্তিত্ব ফজলুল হকের সন্তান ফরিদুর রেজা সাগর। ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ফজলুল হক।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের একটি মূল মিলনায়তনের নামকরণ করেছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তন’। চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফজলুল হক ইন্সটিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রয়াত কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন তার সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠপুত্র ফরিদুর রেজা সাগর শিশু সাহিত্যিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি. ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্থপতি। বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ কাকলী সুগৃহিনী।
ইতিমধ্যে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন : সাইদুল আনাম টুটুল এবং ফজল শাহাবুদ্দিন (২০০৪), চাষী নজরুল ইসলাম ও আহমদ জামান চৌধুরী (২০০৫), হুমায়ূন আহমেদ ও রফিকুজ্জামান (২০০৬), সুভাষ দত্ত ও হীরেন দে (২০০৭), গোলাম রাব্বানী বিপ্লব ও আবদুর রহমান (২০০৮), আমজাদ হোসেন ও সৈয়দ শামসুল হক (২০০৯), মোরশেদুল ইসলাম ও চিন্ময় মুৎসুদ্দী (২০১০), ই আর খান ও অনুপম হায়াৎ (২০১১), নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও গোলাম সারোয়ার (২০১২), রাজ্জাক ও রেজানুর রহমান (২০১৩), সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ও আরেফিন বাদল (২০১৪), মাসুদ পারভেজ ও শহীদুল হক খান (২০১৫), আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার (২০১৬), আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভুঁইয়া (২০১৭), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শফিউজ্জামান খান লোদী (২০১৮), কোহিনূর আখতার সুচন্দা ও রাফি হোসেন (২০১৯), আলমগীর ও শামীম আলম দীপেন (২০২০) এবং কাজী হায়াত ও মাজহারুল ইসলাম (২০২১)। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও আবদুলাহ জেয়াদ (২০২২)।
আরো পড়ুন : যুক্তরাজ্যের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক