বাগেরহাট প্রতিনিধি : কয়লা সংকটে টানা এক মাস বন্ধ থাকার পর ফের উৎপাদনে গেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন শুরুর পর পরই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় গত ১৪ জানুয়ারি রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কয়লা আমদানির চেষ্টা করছিলো বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হওয়ার ২৬ দিন পর ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩০ হাজার টন কয়লা মোংলা বন্দরে নিয়ে আসা হয়। পরে এ কয়লা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ইয়ার্ডে নেওয়া হয়।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরও একটি জাহাজ মোংলা আসার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটিতে তিন মাসের কয়লা মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের কয়লা মজুদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ডলার সংকটে এতদিন কেন্দ্রটিতে কয়লার কোনো মজুদ ছিল না।
এছাড়া কয়লা ও ডলার সংকটের মধ্যেও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হলে দেশে চলমান লোডশেডিং বন্ধ হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে বলেন, কয়লা আমদানির পর রাত থেকে নতুন করে উৎপাদন শুরু হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। কয়লা আমদানির নিয়ে যে জটিলতা ছিল, সেই সংকট ধীরে ধীরে নিরসন হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালনা প্রতিষ্ঠান বিআইএফপিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ারুল আজীম বলেন, রাত সাড়ে ১১টা থেকে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথমে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সরবরাহ করা হয়। ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ানো হবে।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে এই বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এ কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে এসেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।