অনেকদিন পর মিরপুর শেরে বাংলায় গর্জে উঠল দর্শক। দেখা গেল আনন্দের ফোয়ারা। মাঠে চরম উত্তেজনা। ম্যাচ বারবার ভিন্ন ভিন্ন দিকে হেলে পড়ছিল।
সবার আশা ছিল বড় স্কোর হবে। তবে ফরচুন বরিশালের বোলারদের সৌজন্যে তা হয়নি। মাঝারি স্কোরিং ম্যাচেও শেরে বাংলায় ফাইনাল হলো ফাইনালের মতোই। উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে ৮ম বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে সাকিবের বরিশালকে তারা হতাশার সাগরে ডোবাল। দুর্দান্ত অল-রাউন্ড পারফর্মেন্সে ম্যাচসেরা সুনিল নারাইন।
রান তাড়ায় নেমে নড়বড়ে শুরু করেন ফরচুন বরিশালের দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর মুনিম শাহরিয়ার। মুস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম ওভার থেকে আসে মাত্র ৪ রান। সবগুলোই এক্সট্রা খাত থেকে। ৭ বল খেলে মুনিমের নামের পাশে ০ রান! শহীদুলের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলটি কবজির মোচরে ঘুরিয়ে প্রথম রানটি নেন ক্রিস গেইল। পরের বলেই মিড অনে ডু প্লেসিসের তালুবন্দি হন ৭ বল খেলে কোনো রান না পাওয়া মুনিম। তিনে নেমে আগ্রাসী মেজাজে দেখা দেন সৈকত আলী। তার ব্যাট থেকেই আসে প্রথম বাউন্ডারি। দ্রুত ঘুরতে থাকে রানের চাকা। মাত্র ২৬ বলে ফিফটি পূরণ করেন সৈকত। তার ৩৪ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংসটি থামে তানভীর ইসলামের বলে ইমরুল কায়েসের তালুবন্দি হয়ে। এর সাথে ক্রিস গেইলের সঙ্গে তার ৫১ বলে ৭৪ রানের জুটির অবসান হয়।
উইকেটে আসেন নুরুল হাসান সোহান। ৩১ বলে ১ চার ২ ছক্কায় ৩৩ করা ক্রিস গেইলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তার স্বদেশি সুনিল নারাইন। নুরুলের সঙ্গী হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৭ বলে ৭ রান করে মুস্তাফিজের অসাধারণ এক ক্যাচে ফিরে যান। বোলার ছিলেন তানভীর ইসলাম। ২১ বলে দরকার যখন ১৯, আরিফুলের সরাসরি থ্রুতে রান-আউট হয়ে গেলেন নুরুল হাসান সোহান (১৪)। ব্যাট ওপরে ছুড়ে মেরে রাগে গজগজ করতে করতে তিনি মাঠ ছাড়েন। ম্যাচে ছড়ায় উত্তেজনা। বরিশালের আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে শান্তর সঙ্গী হন ব্র্যাভো।
কিন্তু তার স্বদেশি সুনিল নারাইন তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ১ রানে। ১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান দেন নারাইন। শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ১৬ রান। আক্রমণে মুস্তাফিজ। প্রথম বল ডট দিয়ে দ্বিতীয় বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ১৫ বলে ১২ করা শান্তকে। ওভার থেকে আসে ৬ রান। শেষ ওভারে ১০ রান আটকানোর দায়িত্ব পান শহীদুল। উইকেটে তৌহিদ হৃদয় আর মুজিব উর রহমান। পঞ্চম বলে হৃদয়ের ক্যাচ ছাড়েন তানভীর। ওই বলে আসে ২। শেষ বলে দরকার হয় ৩ রান। ওই বল থেকে ১ রান আসে। ইমরুলের থ্রোয়ে রান-আউটও হয়ে যান মুজিব। ১ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২টি করে উইকেট নেন তানভীর ইসলাম আর সুনিল নারাইন।
এর আগে বিপিএলের গ্র্যান্ড ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৫১ রান তোলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ক্যারিবীয় অল-রাউন্ডার সুনিল নারিন আজও শুরু থেকে ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। প্রথম ওভারের শেষ তিন বলে মুজিব উর রহমানকে দুটি ছক্কা আর একটি বাউন্ডারি মারেন। অন্যদিকে লিটন দাস ছিলেন নিষ্প্রভ। ৬ বলে ৪ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার। এর সঙ্গেই ভাঙে ১৮ বলে ৪০ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর সুনিল নারিন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ২১ বলে তুলে নেন ফিফটি।
আগের ম্যাচেই তিনি বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েছিলেন। অবশেষে এই ক্যারিবীয়কে থামান মেহেদি রানা। তার একটি স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিসটাইমিং হয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন ২৩ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় ৫৭ রান করা নারাইন। ক্যাচটি নেওয়ার পর শান্তর নাচ ছিল দেখার মতো। নারাইনের আউটে ম্যাচে ফিরে বরিশাল। কুমিল্লার রান তোলার গতি কমে আসে। দ্রুতই রান-আউট হয়ে ফিরে যান ৭ বলে ৮ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়।
ফাইনালের মঞ্চে আলো ছড়াতে পারেননি ফাফ ডুপ্লেসিস (৪)। মুজিব উর রহমানের অফ স্টাম্পের ডেলিভারিটি মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ধরা পড়েন বোলারের হাতে। ১২ বলে ১২ রান করা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস তো চরম বাজে শট খেলে ডিজে ব্র্যাভোকে উইকেট বিলিয়ে দেন। ৯৪ রানে কুমিল্লার ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়। উইকেটে এসেই গোল্ডেন ডাক মারেন আরিফুল হক। তার লেগ স্টাম্প উপড়ে দেন মুজিব। ৬ নম্বরে নামা মঈন আলীও আজ ধীরে শুরু করেন।
৭ম উইকটে মঈনের সঙ্গে আবু হায়দার রনির জুটিতে এগোতে থাকে কুমিল্লা। রান উঠছিল খুব ধীরে। শেষের দিকে মঈন হাত খুলেছিলেন। কিন্তু যখন তাকে বেশি প্রয়োজন ছিল, সেই শেষ ওভারের প্রথম বলে দ্রুত দুই রান নিতে গিয়ে রান-আউট হয়ে যান। মঈনের সংগ্রহ ৩২ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ৩৮। সেইসঙ্গে ভাঙে ৫১ বলে ৫৩ রানের জুটি। তৃতীয় বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৯ করা আবু হায়দারও শফিকুলের বলে ক্যাচ দেন। চতুর্থ বলে ডাক মারেন শহিদুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫১ রান তোলে কুমিল্লা।