বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন। গতকাল শনিবার ‘শেখ হাসিনা :বাংলাদেশ’স ডিফেন্ডার অর অ্যাটাকার অব ডেমোক্রেসি?’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়েছে। যদিও সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ আগেই সম্প্রচার করা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন আলজাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অবশ্যই, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। গত দুই নির্বাচন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। গত দুটি নির্বাচনই যথার্থ হয়েছে। জনগণ আমার দলকে ভোট দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কারণ তাদের নেতারা দুর্নীতি, অস্ত্র মামলা, গ্রেনেড হামলার দায়ে দোষীসাব্যস্ত হয়ে সাজা পেয়েছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম আপনাকে স্বৈরাচারী নেতা বলে অভিহিত করে-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলজাজিরা বা পশ্চিমা গণমাধ্যম আমাকে স্বৈরাচারী সরকার বললে, যখন আমাদের দেশ সামরিক স্বৈরাচার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, সেটাকে কীভাবে তারা ব্যাখ্যা করবে? যারা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হননি।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। সেদিন আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এর পর সামরিক স্বৈরাচাররা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। আমরাই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা জনগণকে তাদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন করেছি।’
দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা এ নিয়ে অপপ্রচার চালায়, তারা আসলে অসাংবিধানিক সরকার চায়। তিনি বলেন, যখন আমার পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল, আমি, আমার বোন তখন দেশে ফিরতে পারিনি। দেশের বাইরে আমাদেরকে শরণার্থীর মতো থাকতে হয়েছে। আমি যখন দেশে ফিরলাম, তখন খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি নিজেও ভিকটিম হয়েছি। তারা বেশ কয়েক বার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রকাশ্যে দিবালোকে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। কিন্তু ঐ ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি, বিচার করেনি।’
আপনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করা হয়, এখন বিরোধীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আমাদের খুবই নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন যেসব দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চাইছে, আসলে তারাই এই ব্যবস্থাকে নষ্ট করেছে। এটি আমি করিনি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করেছে। তারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। আমার সময়ে দেশে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমে এসেছে।’ আলজাজিরার ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে রিলিজ করা ২৫ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন, মানবাধিকার বিষয় ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা, এলডিসি দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণসহ নানা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন।
আরো পড়ুন : আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী আঘাত হানার আশঙ্কা