যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত দ্রুত রাশিয়ার প্রভাবমুক্ত হোক। ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে ওয়াশিংটন এই স্পষ্ট বার্তা আরও একবার ভারতের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। গত সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভারত নিজেই তার সিদ্ধান্ত নেবে। নিচ্ছেও। যখন তারা দেখবে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ও বোঝাপড়া কত গভীর, তখন নিশ্চিতভাবে তা তাদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করবে।
এই বার্তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা কী এবং কীভাবে ভারত তাদের সন্তুষ্ট করতে পারে।
দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রাক্কালে তাঁদের উপস্থিতিতে সোমবার দুই সরকারপ্রধানের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে ভারত তার মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইউক্রেন সমস্যার সমাধানে ভারত কী চাইছে তা যেমন প্রধানমন্ত্রী মোদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, তেমনই বলেছেন বুচা গণহত্যায় ভারতের অবস্থান কতটা কড়া। গণহত্যার নিন্দা করে মোদি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি সমর্থন করে বলেছেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমি একাধিকবার কথা বলে অনুরোধ করেছি, তাঁরা যেন পরস্পরের সঙ্গে আলাপ অব্যাহত রেখে সমস্যার সমাধানে পৌঁছান।
মোদি এর পাশাপাশি ইউক্রেনের জন্য কী পরিমাণ ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছেন তা বিস্তারিত জানান বাইডেনকে। নিরপেক্ষ অবস্থান ব্যাখ্যার পাশাপাশি আশাবাদ ব্যক্ত করে বাইডেনকে তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়েই শান্তির সন্ধান পাওয়া যাবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের একাধিক দেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া প্রকাশ্যেই এ নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে মোদি-বাইডেন বৈঠক কেমন হয় সে বিষয়ে স্বাভাবিক একটি উৎসাহ সব মহলে ছিল। সোমবার শীর্ষ স্তর ও মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বেশ বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ভারতের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয়। তবে মনোভাব বদলাতে তারা চাপ সৃষ্টি করতে চায় না। যদিও আলোচনা অব্যাহত রাখবে জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট, তারা চায় রাশিয়া সম্পর্কে ভারতের মোহ দ্রুত ভঙ্গ হোক। তবে তারা এ–ও জানে, সেটা তখনই হবে যখন রাশিয়া ও চীনের মাখামাখি ভারতের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ইউক্রেন নিয়ে ভারতকে অযথা চাপে না রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র যে অনড়, সে কথা সোমবারেই স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘ভারতে একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। সেদিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। আমরা নিয়মিত এই বিষয়ে মতবিনিময় করছি। ভারতে ইদানীং বেশ কয়েকজন সরকারি, জেল ও পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’
কোন কোন ঘটনার কথা ব্লিঙ্কেন উল্লেখ করছেন তা যেমন জানাননি, তেমনই তাঁদের পাশে থাকা ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরাও মানবাধিকার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
দিনকয়েক আগে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছিলেন বাইডেনের ডেমোক্র্যাট পার্টির সাংসদ ইলহান ওমর। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি মোদি সরকারের আচরণ নিয়ে। জানতে চেয়েছিলেন, এই ভারতকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী ভাবা যায় কি না। এর পরপরই ব্লিঙ্কেনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
আরো পড়ুন : গোবিন্দগঞ্জে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক